
রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ সীমান্তে ফেলানী হত্যার বিচার প্রসঙ্গে তার বাবা বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, “আমার নিরপরাধ কিশোরী মেয়েটাকে পাখির মতো গুলি করে মারল। মৃত্যুযন্ত্রণায় শুধু পানি পানি করে চিৎকার করছিল। এক ফোঁটাও পানি দেয়নি তারা। তার লাশ উল্টো করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখল।”
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন। বাবার সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। ঘটনার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার ঝুলে রয়েছে ভারতীয় আদালতে।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মামার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়া হয়।
রায় প্রত্যাখান করে পুনর্বিচার দাবির পর দ্বিতীয় দফায়ও তাকে খালাস দেওয়া হয়। পরে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ফেলানীর পরিবারের পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। কিন্তু সেখানে বারবার শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি নতুন তারিখ নির্ধারিত হলেও রহস্যজনকভাবে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, “ফেলানী হত্যার ১৪ বছর হয়ে গেল, কিন্তু এখনো বিচার পাইনি। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে গেলাম, কয়েকবার শুনানির তারিখ দিলেও তা পিছিয়ে গেছে। আমার জীবদ্দশায় আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীর বিচার দেখে যেতে চাই।”
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম নতুন সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, “আমার একটাই দাবি—এই বিচার যেন আন্তর্জাতিক আদালতে হয়।”
আরও পড়ুনঃ রায়পুরায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ভান্ডার থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ
বাদীপক্ষের আইনজীবী এস. এম. আব্রাহাম লিংকন বলেন, “ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা রিটটি নিষ্পত্তি হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হবে এবং এই ধরনের খুন-খারাবি কমে আসবে।”
স্থানীয়রা এবং ফেলানীর স্বজনরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিচার সম্পন্ন হতে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে। বিগত সরকারের অবহেলাকেও দায়ী করেছেন তারা।
১৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আজও আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয়ভাবে আলোচনার বিষয়। ফেলানীর পরিবারসহ সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—ন্যায়বিচার এবং সীমান্তে এমন নির্মমতার স্থায়ী অবসান।