মো: আলিফ হোসাইন, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচির আওতায় ৪৯২টি বিশেষ গবেষণা প্রকল্পের জন্য সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির (প্রথম ভাগ) ৫০% অনুদান বরাদ্দ দিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এই অর্থ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT)-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে।
এই গবেষণা অনুদান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (MBSTU) গবেষকদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্প রয়েছে।
গবেষণা প্রকল্প ও অনুদানপ্রাপ্ত গবেষকরা
জীববিজ্ঞান বিভাগ: প্রাকৃতিক উৎস থেকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধকারী যৌগ শনাক্তকরণ ও কার্যকারিতা মূল্যায়নে গবেষণা পরিচালনা করছেন বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহ আদিল ইশতিয়াক আহমেদ এবং সহকারী অধ্যাপক রুখসানা খানম। এই গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২.৫ লাখ টাকা।
ডেঙ্গু ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং সম্ভাব্য প্রতিকার অনুসন্ধান নিয়ে গবেষণা করছেন প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খায়রুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তাদের প্রকল্পেও ২.৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়া রোগীদের ঝুঁকি মূল্যায়নে XRCC5 জিনের পরিবর্তন বিশ্লেষণের জন্য গবেষণা করছেন সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ও প্রভাষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তাদের প্রকল্পের জন্যও ২.৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীতে সাইটোক্রোম P450 (CYP) rs 2018024890 জিনের পরিবর্তন ও করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি মূল্যায়ন বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করছেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান মোগল ও অধ্যাপক কে. এম. কাদেরি কিবরিয়া। এই প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ লাখ টাকা।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ: চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামুদ্রিক ঝিনুক ও শামুকের মধ্যে অর্গানোটিন যৌগের উপস্থিতি ও এর প্রভাব মূল্যায়নে গবেষণা করছেন অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হক ও সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির। তাদের প্রকল্পে ৩ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
পানির উৎস ও পানীয় জলে ১,৪-ডাইঅক্সেন দূষণ এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকি মূল্যায়নে গবেষণা পরিচালনা করছেন পরিবেশ বিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তন্ময় রায় তুষার ও সহযোগী অধ্যাপক নওয়ারা তামান্না মেঘলা। এই গবেষণায় ২.৫ লাখ টাকা অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভাগ: বাংলাদেশি লিভার ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে লেনভাটিনিব ওষুধ প্রতিরোধের সঙ্গে জিনগত পরিবর্তনের সম্পর্ক অনুসন্ধানে গবেষণা করছেন বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. ফজলুল করিম ও সহকারী অধ্যাপক শাহীন মাহমুদ। তাদের গবেষণার জন্য বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশি নারীদের ডিম্বাশয় ক্যান্সারে BRCA1 ও BRCA2 জিন পরিবর্তনের উপস্থিতি ও প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন সহযোগী অধ্যাপক আয়শা ফেরদৌসি ও অধ্যাপক অনিমেষ সরকার। তাদের গবেষণা প্রকল্পেও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের বৃক্ষ হত্যা ও পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন
ভৌত বিজ্ঞান বিভাগ: ১,৩,৪-থায়াডিয়াজোল যৌগের সংশ্লেষণ ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে সম্ভাব্য ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধের গবেষণা পরিচালনা করছেন রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশিস কুমার সরকার ও সহকারী অধ্যাপক মুক্তা দাস। এই প্রকল্পে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা।
উন্নত বৈদ্যুত্র রাসায়নিক সেন্সর ডিজাইন ও প্রস্তুতির মাধ্যমে গ্লুকোজ এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সনাক্তকরণের গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবু রাশেদ ও সহকারী অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন। তাদের প্রকল্পের জন্যও ৫ লাখ টাকা অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় সরকারের এই অনুদান নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গবেষকরা আশা করছেন, এই প্রকল্পগুলো দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।