spot_img

― Advertisement ―

spot_img

উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন বেরোবি শিক্ষার্থীরা

বেরোবি প্রতিনিধি: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন করা শিক্ষার্থীরা অবশেষে উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন।বুধবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের বেগম...
প্রচ্ছদবিশেষ প্রতিবেদনভালুকার মল্লিকবাড়ী বটগাছের ছায়ায় টিকে আছে নরসুন্দরের ঐতিহ্যবাহী হাট

ভালুকার মল্লিকবাড়ী বটগাছের ছায়ায় টিকে আছে নরসুন্দরের ঐতিহ্যবাহী হাট

আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি ● শহরজুড়ে ঝলমলে আধুনিক সেলুনের দাপট, তবু ময়মনসিংহের ভালুকার মল্লিকবাড়ী বাজারের বিশাল বটগাছের নিচে এখনো প্রতি শনিবার জমে ওঠে এক ব্যতিক্রমী হাট—নরসুন্দরের হাট। যুগ বদলেছে, যন্ত্র আর কাচের কেবিনে ছেয়ে গেছে চুল-দাঁড়ি কাটার পেশা, কিন্তু এখানে কাঁচি আর আয়নার শব্দে এখনও বেঁচে আছে এক জীবনসংগ্রামের গল্প, পেশাগত ঐতিহ্য আর লোকজ সংস্কৃতির এক প্রাচীন ছাপ।

এই হাট বসে সপ্তাহে মাত্র একদিন—শনিবার। হাটের সবচেয়ে নজরকাড়া দৃশ্য হলো বিশাল বটগাছের ছায়ায় সারি ধরে বসা একদল নরসুন্দরের কর্মব্যস্ততা। কেউ কেউ এই ছায়াতলেই কাটিয়েছেন জীবনের অর্ধশতাব্দী। ত্রিশালের বগারবাজারের রায়মন চন্দ্র শীল (৭০) বলেন, “পাকিস্তান আমল থেকে কাজ করছি। তখন হাতে কাজ থাকত, পকেটে টাকা থাকত। এখন সেই জৌলুস নেই। দিনে পাঁচশও আয় হয় না।”

তামাট গ্রামের ইন্দ্রমোহন (৭০) দেড় যুগ ধরে এখানে নরসুন্দর হিসেবে কাজ করছেন। স্মৃতিমেদুর হয়ে বলেন, “আগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হতো। এখন খদ্দেরের সংখ্যা কম, আয়ও কম।” তবে শুধু অভিজ্ঞরাই নন, তরুণরাও রয়েছেন এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে। হাজিরবাজারের সুমন শীল (২৪) নিজ গ্রামে সেলুন চালালেও প্রতি শনিবার ছুটে আসেন বটগাছের ছায়ায়। তাঁর ভাষায়, “এখানে একটা টান আছে, খদ্দেররাও আপন হয়ে গেছে।”

প্রবীণ নরসুন্দর নুর মোহাম্মদ (৭৩) বলেন, “মাত্র ১০ বছর বয়সে এই বাজারে কাঁচি ধরেছি। আজও সেই পেশায় আছি। আয় কম হলেও পেশার প্রতি ভালোবাসা থেকে ছাড়তে পারিনি।”

৯০ বছর বয়সী নিয়মিত খদ্দের ফয়েজ উদ্দিন বলেন, “অনেক বছর ধরেই এখানে চুল-দাঁড়ি কাটাই। সেলুনে গেলে খরচ বেশি পড়ে, এখানে কম খরচে ভালো কাজ হয়।”

আরও পড়ুনঃ ইবিতে ছাত্রশিবিরের তিন দিনব্যাপী বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন

এই বটগাছের ছায়া, পুরনো কিছু আয়না আর কাঁচির শব্দে এখনও টিকে আছে শতাব্দীপ্রাচীন এক জীবিকা। মল্লিকবাড়ীর এই নরসুন্দর হাট শুধু একটি পেশার কেন্দ্র নয়, বরং এটি একেকটি জীবনের গল্প, সংস্কৃতির স্মারক। প্রতি শনিবার বসা এই হাট এখনো বহু পরিবারের জীবিকার উৎস, এক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার অব্যাহত সংগ্রাম।

ডিজিটাল আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসা এই প্রাচীন পেশা এখনও বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতি, মমতা আর প্রয়োজনের টানে—এক চিরচেনা বটগাছের ছায়ায়।