spot_img

― Advertisement ―

spot_img

ইবিতে ফের নেকাব নিয়ে কটাক্ষের অভিযোগ ইবি শিক্ষকের বিরূদ্ধে

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ভাইভাতে নেকাব নিয়ে কটাক্ষসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তার অভিযোগ করেছেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের এক ছাত্রী। অভিযুক্ত বিভাগের সহযোগী...
প্রচ্ছদসারা বাংলাইবিতে ফের ছাত্রী হেনস্তাসহ নানা অভিযোগ এক শিক্ষকের বিরূদ্ধে

ইবিতে ফের ছাত্রী হেনস্তাসহ নানা অভিযোগ এক শিক্ষকের বিরূদ্ধে

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ যৌন হয়রানি, ছাত্রীদের ইমোতে ভিডিও কল দেওয়া, কুরুচিপূর্ণ মেসেজ প্রদান, নম্বর কম দেওয়া, রুমে ডাকা, বাজে ইঙ্গিত, কটূক্তি, বডি শেমিং ও বিবাহিত ছাত্রীদের বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের উপকারিতা বোঝানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষক বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুুল ইসলাম।

গত ২২ জুন এসকল অভিযোগ উল্লেখ করে বিভাগটির অন্তত ডজনখানেক ছাত্রী বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত জমা দেন।
একইসঙ্গে তারা তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় বিভাগটি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টায় শিক্ষকরা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে আসছিল। তবে এতোদিন কেউ মুখ খোলার সাহস করেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাকে বিরত রেখেছে বিভাগটি। তবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা।

অভিযোগে এক ছাত্রী লেখেন, ‘স্যার আমাকে ইমোতে ভিডিও কল দেন। আমি কল রিসিভ না করায় পরে অডিও কল দেন। তখন তিনি বলেন, অনেকদিন তোমাদের দেখি না, তোমরা মোটা হয়েছো না চিকন হয়েছো দেখার জন্য ভিডিও কল দিচ্ছি। তারপর উনি বলেন, তোমার কি কথা বলার লোক আছে?’ আমি বলি না নেই। তখন তিনি বলেন, এখন বলছো কেউ নাই, কিছুদিন পর তো দেখবো ক্যাম্পাসে কোনো ছেলের হাত ধরে ঘুরছো।’ তাছাড়াও দাম্পত্য জীবন, ব্যক্তিগত শারীরিক ও প্রাইভেট পার্ট নিয়েও জিজ্ঞাসা করেন। এছাড়াও অনেক ছাত্রীকেই তিনি ভিডিও কল দিতেন বলে ছাত্রীরা জানিয়েছেন।

আরেক ছাত্রী লিখেন, স্যার একদিন আমাকে আলাদাভাবে রুমে ডেকে বলেন, তুমি ভালো বাসা পেলে আমাকেও একদিন রুমে দাওয়াত দিও। তোমাকে বলেছিলাম, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শারীরিক সম্পর্ক না থাকলে সংসার টিকে না। তুমি আমার কথা শুনো নাই।’ এসময় তিনি আমাকে বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ও ফ্রি-মিক্সিং এর উপকারিতা বোঝান। অপর এক ছাত্রীকে ওই শিক্ষক বলেন, এত সুন্দর হয়ে কী লাভ? যদি কোনো বয়ফ্রেন্ডই না থাকে।

ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, ওই শিক্ষক দ্বারা হেনস্তার শিকার ছাত্রীদের অনেকেই বিবাহিত হওয়ায় তারা তাদের পরিবারের কথা ভেবে এতোদিন মুখ খোলেননি। কেউ কেউ তার যন্ত্রনায় সুইসাইডাল অ্যাটেমপ্ট নিতে চেয়েছিল। সাময়িক অব্যাহতি কোনো সমাধান নয়। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাই।

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করে অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি তাদের সাথে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলেছি তারা সেটাকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি। আমি কোনো শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করিনি। বরং তারা আমার কথা ও কাজকে ভুলভাবে নিয়েছে। আমি মনে করি পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে অসত্য অভিযোগ দিয়েছে। আর কখন কোন পরিস্থিতিতে কি বলেছি তা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

আরও পড়ুনঃ কুয়াকাটায় পরীক্ষায় অসদুপায়ে লিপ্ত দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

তিনি বলেন, বিভাগের বিভিন্ন কাজের সুবাদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনেক প্রোগ্রাম ও মিটিং করেছি, আমি তাদের আন্তরিকতা নিয়ে সুন্দর ড্রেস পড়ে আসার কথা বলেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি সবার মেন্টালিটি সমান না। আর অনেক সময় ক্লাসে দেরি করে আসলে তাদেরকে অফিসে ডেকে নিয়ে যদি কথা বলি এটা কি খারাপ কিছু?

এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আপাতত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ছাত্রী হেনস্তা, শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, কথা না শুনলে মার্ক কম দেওয়া ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করা সহ নানা অভিযোগ ওঠে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত ২টি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৪(১) (চ) ধারা মোতাবেক তাকে ৩১ মে থেকে চাকুরী থেকে অপসারণ (Dismissal from Service) করে প্রশাসন।