
মোঃ ইকরাম হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক: জুনের শেষ হতেই জুলাইয়ের ভোরে নতুন মাসের আগমন, নতুন কিছু প্রত্যাশা। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ যেন বর্ষার রঙে রাঙিয়ে তুলেছে দাউদকান্দির কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিকে। আকাশে ছায়া মেঘ, চারপাশে স্নিগ্ধ বাতাস, আর ঘন ঘন বৃষ্টির ছোঁয়ায় সতেজ হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক প্রাকৃতিক ক্যানভাস।
এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি শুধু একটি শিক্ষাকেন্দ্র নয়, বরং বর্ষায় এক সজীব কবিতা—যেখানে ফুলের গন্ধ, পাখির কুজন আর গাছপালার সবুজ শোভা মিলে অপার্থিব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে।
কেন্দ্রটির চারপাশ জুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। প্রতিটি ফুল যেন নিজের সৌন্দর্যের ব্যাখা নিয়ে দাঁড়িয়ে। নয়নতারা, জারুল, জবা, লাল রঙন, শিউলির মতো ফুলগুলো প্রশিক্ষণ নিতে আসা তরুণ-তরুণীদের টেনে নেয়, সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। এখানে যেন কোনো ফুল অবহেলিত নয়—শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের সমান আকর্ষণ রয়েছে প্রতিটির প্রতিই।
বর্ষার ধোয়া জলে প্রতিটি পাতায় যেন জ্যোৎস্নার দ্যুতি ছড়ায়। প্রতিটি ফুল যেন নতুন করে জীবনের আহ্বান জানায়। কৃষ্ণচূড়ার মতোই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তার রঙিন সৌন্দর্য দিয়ে প্রতিদিনই প্রশিক্ষণার্থীদের মন ছুঁয়ে যায়। প্রশান্তির প্রতিটি শ্বাস এখানে গন্ধে, রঙে আর কর্মমুখী শিক্ষার প্রতিফলনে ভরে ওঠে।
দাউদকান্দি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ জনাব আনোয়ার হোসেন শুধুই একজন প্রশাসক নন—একাধারে একজন শিল্পপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী ও সৃজনশীল নেতৃত্বের প্রতীক। তার অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠানটি আজ একটি ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে।
এখানে একদিকে যেমন রয়েছে উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ, অন্যদিকে রয়েছে চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক শোভা। এই কেন্দ্রে কম্পিউটার অপারেশন, গ্রাফিক ডিজাইন, ইলেকট্রিক, প্লাম্বারিং, বিদেশগামীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণসহ নারী-পুরুষ সবার জন্য নানাবিধ কারিগরি কোর্স চালু রয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দাউদকান্দি, তিতাস, মেঘনা, হোমনা, চান্দিনা—এই অঞ্চলের শত শত মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু পেশাগত দক্ষতাই নয়, এই কেন্দ্র তাদের শিখিয়েছে কীভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে থেকেও মানবিক ও পরিশীলিত হয়ে গড়ে ওঠা যায়।
বর্ষার দিনে বৃষ্টি থেমে গেলে, যখন ছাদের পাতা থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু জল, তখন এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিটি কোণ যেন একেকটি গল্প বলে। পাখির ডাক, হাওয়া আর বৃষ্টির মুগ্ধতা মিলে প্রশিক্ষণার্থীদের মনে জাগিয়ে তোলে নতুন স্বপ্নের আলো।
আরও পড়ুনঃ ৪৪ তম বিসিএসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ শিক্ষার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত
ক্লাসের ফাঁকে হাঁটতে হাঁটতে তারা থেমে যায় ফুলের পাশে, যেন জীবনের এক নতুন মানে খুঁজে পায় প্রতিটি পাঁপড়িতে। কম্পিউটার ক্লাস শেষে ছেলেমেয়েরা বিশ্রামের ফাঁকে হাসনাহেনার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে; কেউ কেউ শিউলি ফুলের পাশে গল্প করে। কারও খোঁপায় গুঁজে থাকে জবা ফুল, কেউ তুলে রাখে খাতার পাতায়। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তারা উপভোগ করছে জীবনের সৌন্দর্য আর প্রকৃতির শান্তি।
এই কেন্দ্র এখন আর শুধু একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নয়—এ যেন এক টুকরো শিল্প, এক খণ্ড স্বপ্ন, এক রঙিন বসন্তময় বর্ষার প্রতিচ্ছবি। এখানে শিখছে মানুষ, বদলাচ্ছে জীবন, আর প্রকৃতি শিখিয়ে দিচ্ছে—সৌন্দর্য আর শিক্ষা যদি হাতে হাত রেখে চলে, তবে পরিবর্তন শুধু সম্ভব নয়, তা অনিবার্য।
দাউদকান্দি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন গ্রীষ্মের কৃষ্ণচূড়া, বর্ষার কদম, আর শিক্ষার দীপ্ত বাতিঘর — একসাথে।