
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ রাজধানীর মিটফোর্ডে যুবদল নেতা মঈনের নেতৃত্বে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় সোহাগ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা।
শুক্রবার (১১জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধীর নেতারা ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বরে সমাবেশ শুরু করলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রধান ফটকে সমাবেশের জন্য দাবি তোলেন। এসময় বৈষম্যবিরোধীর নেতারা বক্তব্য প্রদান করে সমাবেশ শেষ করলেও এক অংশ শিক্ষার্থী প্রধান ফটকে এসে অবস্থান করেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘চাঁদাবাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, চাঁদাবাজের বিচার চাই’, ‘যুবদলের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, চাঁদাবাজ নো মোর’, যে হইবি স্বৈরাচার, তারে বলবো বাংলা ছাড়’, ‘বিএনপি- যুবদল, তুই খুনি তুই খুনি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সহ-সমন্বয়ক সৌরভ বলেন, আমরা একটি বড় রাজনৈতিক দলের মুখে বারবার শুনি নির্বাচন না দিলে নাকি দেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক হবে না। কিন্তু আমরা এটাও দেখতে পাই যে নির্বাচন না হওয়ার কারণে ওই সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি খুনের রাজনীতি করতেছে, এই খুনের রাজনীতি তারাই কায়েম করতে চায় আর তারাই বলতেছে নির্বাচন চাই। আমরা দেখতে পাই গত ১৭বছর একটি সরকার কিভাবে স্বৈরাচার কায়েম করেছিলো। আমরা দেখতে পেয়েছি গত ৯ জুলাই একজন ব্যবসায়ী ভাইকে চাঁদার জন্য কিভাবে নৃশংস, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এদিকে প্রধান ফটকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থানকালে শাখা ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীন বাংলার একজন নাগরিককে চাঁদা দেয় নাই, সেই অজুহাতে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছে। কারা করেছে সেটা জাতির কাছে স্পষ্ট হয়েছে। তারা মানুষকে হত্যাই করে নাই লাশের উপর দাঁড়িয়ে নিত্য করেছে। আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই চব্বিশের স্বাধীন বাংলাদেশে যারা চাঁদাবাজ কায়েম করতে চাইবে জনগণ তাদেরকে কখনো মেনে নেবে না। যারা একের পর এক ধর্ষণ, চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে তাদেরকে বলতে চাই আমরা এই বাংলাদেশ দেখার জন্য আন্দোলন করি নাই। আবু সাঈদরা এই বাংলাদেশ করার জন্য রক্ত দেয় নাই।
আরও পড়ুনঃ মিটফোর্ডের সামনে প্রকাশ্যে খুন: গ্রেপ্তার ৪, একজনের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল উদ্ধার
তারা আরও বলেন, আমরা দেখেছি যুবদলের এক কর্মীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ী সোহাগের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। আমরা ব্যক্তির দায় কোনো সংগঠনকে দিতে চাই না। তবে ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বলবো আপনারা আপনাদের মেরুদন্ড সোজা করুন। মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য বিপ্লবী জনতা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। যখন মানুষ মারা যাবে, অন্যায়ের শিকার হবে কিন্তু আপনারা মেরুদন্ড শক্ত করে তার বিচার করতে পারবেন না, তাহলে জনগণ আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিবে। তাই অপরাধী যেই দলেরই হোক তার সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আলাদা সমাবেশের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, কে বা কারা প্রধান ফটকে সমাবেশ করেছে আমি জানি না। আমাদের লক্ষ্য প্রধান ফটকে যাওয়া নয় বরং অন্যায়ের প্রতিবাদে কর্মসূচি। কেউ যদি আন্দোলনে আসতে চায় তাকে অবশ্যই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। আর কেউ যদি শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে কর্মসূচি করে তাহলে আমরা তাদেরকে স্ব উদ্যোগে, আলাদা করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আহ্বান করবো।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই রাজধানীর পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে যুবদল নেতা মঈনের নেতৃত্বে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরে এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।