
মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কলেজে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত শহীদ দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে কলেজের একমাত্র শহীদ রায়হান আলীর পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগে কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শহীদ দিবসের এই আনুষ্ঠানিকতা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী কলেজেও পালিত হয় ‘জুলাই শহীদ দিবস’। কলেজ শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির নেতারা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বক্তব্য রাখলেও রায়হান আলীর পরিবার বা আহত যোদ্ধাদের কাউকেই এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, শহীদদের স্মরণে এমন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে শহীদ পরিবারের অনুপস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। শহীদদের আত্মত্যাগের সাক্ষ্য বহন করে তাদের পরিবার। তাদের ছাড়া শহীদদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হয় না। এটি একটি অবিবেচিত সিদ্ধান্ত, যা অনতিবিলম্বে সংশোধন করা প্রয়োজন।
ছাত্রশিবির রাজশাহী কলেজ শাখার সেক্রেটারি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, রাজশাহী কলেজের গর্ব রায়হান আলী ভাইয়ের পরিবারকে বাদ দিয়ে এই অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। এমনকি কলেজ ভবনের নামকরণের সময়ও শহীদের নামের বানানে ভুল করেছিল প্রশাসন। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয়, কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ইতিহাস ও শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে অনাগ্রহী।
কলেজের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক বলেন, কলেজ প্রশাসনের ২৪-ইস্যুতে আচরণ বরাবরই অপ্রত্যাশিত। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাহ্যিক পরিবর্তন থাকলেও অভ্যন্তরে একটি গোষ্ঠী এখনও বিতর্ক ও ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টায় লিপ্ত। নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রচারণা, তদন্ত প্রতিবেদন উপেক্ষা, বিতর্কিত শিক্ষকদের প্রশ্রয়, এবং রায়হান আলীর নামকরণে অবহেলার মতো ঘটনা এগুলোরই প্রমাণ।
আরও পড়ুনঃ সবুজের সমারোহে দেশ বাঁচাতে ইবির গ্রীন ভয়েস’র বৃক্ষরোপণ
এ বিষয়ে শহীদ রায়হান আলীর বাবা মো. মুসলেম উদ্দীন বলেন, “কলেজ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। আমরা সেই সময় জেলা প্রশাসকের আয়োজনে উপস্থিত ছিলাম। জানলে কলেজের অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করতাম।”
উল্লেখ্য, শহীদ রায়হান আলী রাজশাহী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় রাজপথে নিহত হন। সেই আন্দোলনের একমাত্র শহীদ হয়েও তার পরিবারকে শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে ডাকা না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের আচরণকে অনেকে ‘অসংবেদনশীল’ ও ‘ইতিহাস বিমুখ’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে শহীদ দিবস কর্মসূচির সভাপতি এবং কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।