
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি ও হল কর্তৃপক্ষ থেকে পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি করা হয়। আকস্মিক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে উভয় কমিটি। তদন্তের স্বার্থে রোববার (১৯ জুলাই) ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে উন্মুক্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়েছে।
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র সাজিদ আব্দুল্লাহ মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের লক্ষ্যে প্রশাসন কর্তৃক গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপনাদের কাছে কোন তথ্য থাকলে প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। ২০ জুলাই সকাল ১০ টা থেকে ২৩ জুলাই সকাল ১০টার মধ্যে লিখিতভাবে কমিটির আহবায়ক বরাবর অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে (০১৭১৫২১০০১২ ও ০১৭১৬০৫৩৫৯৬) পৌঁছানোর জন্য আহবান করা হয়েছে।
অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মৃত্যুর কারণ ও পেছনের সম্ভাব্য রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ এমতাজ হোসেন বলেন, ‘আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে আমরা সক্ষম হব। এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর যেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে না ঘটে, এটাই হবে আমাদের মূল টার্গেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের নিরাপত্তার জন্যই এই ঘটনার পেছনের সত্যটা বের করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এজন্য আইসিটি সেল-এর কাছে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তথ্য লিখিতভাবে অথবা হোয়াট্স অ্যাপ-এর মাধ্যমে দেয়া যাবে। প্রদানকৃত তথ্য শতভাগ গোপন রাখা হবে।’
আরও পড়ুনঃ ৩ দফা দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের নেসকো ভবন ঘেরাও
তিনি আরও জানান, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সুরতহাল রিপোর্ট রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)-এর কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। সাজিদের ব্যবহৃত মোবাইলের এক সপ্তাহের কল রেকর্ডও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)-এর মাধ্যমে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে চাওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাজিদের যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কমিটির দুজন সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। হলের যে রুমে সাজিদ আব্দুল্লাহ থাকতো সে হল পরিদর্শন ও তার রুমমেট, বন্ধু সার্কেল এবং শিক্ষকদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলা হবে। এ ঘটনার ব্যাপারে সাংবাদিকদের নিকট যদি কোন তথ্য থাকে তা প্রদানের জন্য কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ ১৫ দফা দাবিতে ১৯ জুলাই ক্যাম্পাসে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট ও ৬ দিনের মধ্যে তাদের দাবিসমূহ পালনের জন্য আবেদন করেন।
দাবিসমূহ হলো পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা, হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও চালু রাখা এবং বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ-সহ অন্তত ১৫টি দাবি তুলে ধরেন। পরে কর্তৃপক্ষ থেকে লিখিতভাবে আশ্বাস পাওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবিগুলো ৬ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করা হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।