
মোঃ তরিকুল ইসলাম কলাপাড়া (উপজেলা) প্রতিনিধিঃ নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে দীর্ঘ সময় ধরে জলোচ্ছ্বাসের উত্তাল ঢেউয়ে সৈকতের বিভিন্ন এলাকা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ সৈকত সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ধ্বংসস্তূপ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কংক্রিটের ভগ্নাংশ ও ভাঙা অবকাঠামো।
ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে আতঙ্কে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, হোটেল-মোটেল মালিক, দোকানদার, পর্যটন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা এবং ধর্মীয় স্থাপনার তত্ত্বাবধায়করা। অনেকেই তাদের দোকানপাট, মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন—ঘূর্ণিঝড় না হলেও এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন পর দেখা গেল কুয়াকাটায়।
পর্যটন ও পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী কেএম বাচ্চু বলেন, “আজকের কুয়াকাটার ভাঙন দেখে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখনই স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।”
কুয়াকাটা প্রেসক্লাব ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক)-এর সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, “কুয়াকাটা যেন এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই মুহূর্তে কুয়াকাটাকে বাঁচাতে হলে জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।”
সৈকতের আশপাশের মসজিদ, মন্দির, ট্যুরিজম পার্ক, হোটেল, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনার মালিকরাও ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন। সাগরের আচরণে তারা উদ্বিগ্ন, কারণ যে কোনো সময় আরও বড় ধসের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টায় জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, ট্যুর অপারেটর ও সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুনঃ কুয়াকাটা সৈকতে জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিলেন পর্যটক, জেলেদের তৎপরতায় রক্ষা পেল প্রাণ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়াস্থ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রভাবে সৈকতের বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে এবং মেরিন ড্রাইভ সড়ক উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইয়াসীন সাদেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখনই কার্যকর প্রতিরক্ষা প্রকল্প হাতে না নিলে ভবিষ্যতে কুয়াকাটা শুধু পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেই নয়, বরং গোটা উপকূলীয় অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠবে।