
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: গণ–অভ্যুত্থানে শহীদের রক্তের মর্যাদা দিতে হলে বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বদলাতে হবে—এমন আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানে শহীদের দেওয়া প্রাণকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে চাই, নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই, তাহলে আমাদের নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে হবে।”
জোনায়েদ সাকি বলেন, “লুটপাট, দখলদারি ও দুর্নীতির এই ব্যবস্থায় কখনোই জনগণের পক্ষে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আসবে না। বিভাজনের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা দাঁড়াতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন গণমানুষের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি—যে শক্তি শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী, ছাত্র-তরুণসহ সব মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে।”
তিনি বলেন, “এই ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ যারা হয়েছেন, তারা আমাদের নতুন পথযাত্রার দিশারি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁদের হত্যার বিচার হয়নি, শহীদ পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়নি, আহতরা পায়নি পূর্ণ চিকিৎসা। এদের দায়িত্ব নেওয়া ছিল সরকারের প্রথম কর্তব্য, অথচ সেটি হয়নি। যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, সেই সরকার এসব দায় এড়াতে পারে না।”
আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় পুলিশের অভিযানে ৮১০ পিস চায়নিজ ফোল্ডিং চাকু ও দুইটি চাপাতি জব্দ
আওয়ামী লীগের শাসনব্যবস্থা প্রসঙ্গে সাকি বলেন, “পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের ফ্যাসিবাদী রূপকে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা তখন থেকেই বলে এসেছি, তারা একটি চিরস্থায়ী স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়, কিন্তু অনেকেই তখন সেটি বুঝতে চায়নি।” তিনি বলেন, “তারা শুধু ভোটের অধিকার নয়, মানুষের সব ধরনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গিলে খেয়েছে। হামলা, মামলা, গুম, খুন আর নির্যাতনের মধ্য দিয়েই তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করেছে।”
গণ–অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে জমা হচ্ছিল। এবারের আন্দোলনে একটি স্বপ্ন ও লক্ষ্য তৈরি হয়েছে—রাষ্ট্রব্যবস্থা বদলানোর। আবু সাঈদ ও ওয়াসিমের আত্মত্যাগ সেই ক্ষোভকে দাবানলে পরিণত করেছে, যা গোটা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মানুষ স্বপ্ন ছাড়া কখনো ঐক্যবদ্ধ হয় না।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আহ্বায়ক মোফাখখারুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন জেলার সংগঠক তুষার আহমেদ। এতে আরও বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, জাতীয় পরিষদের সদস্য আশরাফুল আলম ও ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি ফাতেমা রহমান প্রমুখ।
সমাবেশ শুরুর আগে জোনায়েদ সাকি সন্তোষে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর কবর জিয়ারত করেন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।