
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রয়াত শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর স্মরণে স্মৃতিচারণ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণে বিশেষ ক্যাম্পেইন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষার্থী। প্রয়াত এই শিক্ষার্থীর স্মরণে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে তার সহপাঠী, বন্ধু ও জুনিয়ররা অংশগ্রহণ করেন এবং সাজিদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো স্মরণ করেন। একইসঙ্গে ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদারে লিখিত আকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উত্থাপন করেন তারা।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বরে দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে ‘জাস্টিস ফর শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহ’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী। এতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একাধিক দাবি ও প্রস্তাব গৃহীত হয়।
কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থী তানভীর মণ্ডল স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ইনকিলাব সন্ধ্যা এবং এবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা মঞ্চে একসাথে কাওয়ালি করেছিলাম। পুকুরপাড়ে, বিভিন্ন চায়ের দোকানে একসঙ্গে গানের আড্ডা দিয়েছি অনেক।”
আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, “২০২১ সালে সর্বপ্রথম একসাথে এ ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। আজ সাজিদ ছাড়া একা একা ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতে কষ্ট হচ্ছে।”
আরও পড়ুনঃ ইবি’তে যশোর জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি সাকিব, সাধারণ সম্পাদক ফাহিম
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, এই অকাল মৃত্যু শুধু সাজিদের পরিবার নয়, পুরো ক্যাম্পাসকেই নাড়া দিয়েছে। তাই ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসময় শিক্ষার্থীরা যে প্রস্তাবনাগুলো উত্থাপন করেন, তার মধ্যে রয়েছে— ক্যাম্পাসকে বহিরাগতদের প্রবেশ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা, ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ চলাচলের পরিবেশ নিশ্চিত করা, প্রশাসনের দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল ভূমিকা নিশ্চিত করা, সকল হল প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের হলে আবশ্যিক উপস্থিতি, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন স্থাপন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হ্যালোজেন বা হাই-পাওয়ার লাইট ও সিসিটিভি বসানো, দ্রুত সময়ের মধ্যে ইকসুর (ইবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর অভিযোগ সেল গঠন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, হলের প্রতিটি ব্লকে সিসি ক্যামেরা ও মজবুত ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।
শিক্ষার্থীরা এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোরালো দাবি জানান। একইসঙ্গে প্রয়াত বন্ধু সাজিদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬টায় শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ক্যাম্পাসজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পরদিন ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসন ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে এবং পুকুরে নামার ওপরও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাইকিং করে। এর আগে, ১৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করে নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।