
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার ঘটনায় রাতের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের দাবি করে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে একাংশ শিক্ষার্থী।
সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় ২৪ ঘন্টার মধ্যে আইসিটি সেল, নিরাপত্তা প্রশাসন ও ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে সিসি টিভি ফুটেজ না পাওয়ার কারণ নিয়ে বিবৃতি না দিলে আইসিটি সেল ঘেরাও কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।
মানববন্ধনে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহর নির্মম হত্যাকাণ্ডের রাতে গুরুত্বপূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। এই ঘটনা প্রমাণ ধ্বংসের গুরুতর শঙ্কা সৃষ্টি করছে এবং বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ইঙ্গিত দেয়। সিসি টিভি ফুটেজের পিছনে কারা ছিল, কাদের লবিংয়ে, কাদের মাধ্যমে, কাদের চাপে এ ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে তা আমরা জানতে চাই। অনতিবিলম্বে প্রশাসনকে এর জবাব দিতে হবে। সাজিদ হত্যার বিচার নিয়ে যদি কোনো হেলাফেলা, প্রহসন করার চেষ্টা করা হয় তাহলে এ প্রশাসনকে চূড়ান্ত পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সাবেক সহ-সমন্বয়ক সায়েম আহমেদ বলেন, ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি আপনারা যখন শিক্ষার্থীদের সামনে এসে বললেন ১৬ জুলাইয়ের বিকাল ৫ টা থেকে রাত ১১ টার আইসিটি সেল প্রাপ্ত সিসি টিভি ফুটেজ পান নাই। তখন আপনাদের লজ্জা করে নাই। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রশাসন একটিবারের জন্য ন্যুনতম দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন নাই। তারা বলে নাই এটা আমাদের দায়।
তিনি আরও বলেন, ‘কিভাবে আকস্মিকভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ফুটেজ গায়েব হয়ে যায়? অবশ্যই এর জন্য প্রশাসনকে দায় নিতে হবে। আমাদের সন্দেহ হয় সিসি টিভি ফুটেজ গায়েবের পিছনে অব্যশই কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। আমাদের সন্দেহ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার সক্রিয়তায় কাজ করতে পারছে না। আমাদের মনে হচ্ছে কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী তাদেরকে প্রভাবিত করে এ সিসি টিভি গায়েব করতে বাধ্য করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ২৪ ঘন্টার মধ্যে আইসিটি সেল, নিরাপত্তা প্রশাসন ও ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে বিবৃতি দিতে হবে যে কেন আপনারা ঐ দিনের সিসি টিভি ফুটেজ পান নাই। অন্যথায় আমরা আইসিটি সেলকে করার ঘেরাও করার কর্মসূচি দিচ্ছি।’
আরও পড়ুনঃ সাজিদ হত্যার ইস্যুতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নিয়ে ধোঁয়াশা
এর আগে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সকল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে আন্দোলনস্থলে এসে আইসিটি সেল থেকে প্রাপ্ত সিসি ক্যামেরার একটি অংশের ফুটেজ পায়নি বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন জানান, ‘আইসিটি সেল প্রাপ্ত ১৬ জুলাই বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা পাইনি। এজন্য আমরা আমাদের সুপারিশমালায় এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি যে আইসিটি সেল যেন এ বিষয়টি জানান।’
এ বিষয়ে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী বলেন, ‘ফুটেজ গায়েব হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। একটু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। ফাইল কপি করার সময় হয়তো কোন মিস্টেক হয়েছে। এমন হলে বিষয়টি যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়া আর কিছু নয়। সেদিনের আগে পরে সহ কোনো ধরনের ডেটা লস নেই। আমাদের কাছে সকল ফুটেজ রয়েছে, চাইলে আমরা আবারও কর্তৃপক্ষকে দেখাতে পারবো।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুলাই সাজিদের মৃত্যুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ৩ আগস্ট সাজিদের মৃত্যুর প্রকাশিত ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সর্বশেষ সাজিদের হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।