
মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের সদরের একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা তৌহিদুর রহমান চৌধুরী রাশেদ হঠাৎই যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তার জীবনধারা নাটকীয়ভাবে পাল্টে যেতে থাকে। শুরু হয় বিতর্কিত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এক নতুন অধ্যায়।
ছাত্রলীগের দায়িত্বে আসার পর থেকেই রাশেদ জড়িয়ে পড়েন জমি রেজিস্ট্রি, সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। তিনি তৎকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি ক্যশৈহ্লার “বিশস্ত ও আস্থাভাজন” পরিচয় ব্যবহার করে গড়ে তোলেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সরকারি ঠিকাদারি কাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন তারা।
বান্দরবানের অভিজাত সেগুন বাগিচা এলাকায় রাশেদ কিনে নেন প্রায় ৩ কোটি টাকার জমি এবং সেখানে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন একটি পাঁচতলা ভবন। এছাড়া বিগ্রেড, ছিদ্দিক নগর, যৌথ খামার ও তালুকদার পাড়া এলাকায় কিনেছেন আরও প্রায় ১১ কোটি টাকার জমি ও গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল খামারবাড়ি। এসব সম্পদের উৎস সম্পর্কে যথাযথ ব্যাখ্যা কখনোই পাওয়া যায়নি।
তবে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এখানেই থেমে থাকেনি। অভিযোগ রয়েছে, বান্দরবান ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির জমি নিজের নামে আত্মসাৎ করেন তিনি। পাশাপাশি সরকারি চাকরির নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমেও বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক আবদুর শুক্কুর জানান, রাশেদ শুধু বান্দরবানেই নয়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকাতেও ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, রাশেদ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার আগে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে ছিলেন না। ছাত্রলীগের পদ পেয়েই তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় ভূমি দখল, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের হুমকি, এমনকি বিএনপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জায়গা দখলের মতো ঘটনাতেও জড়িয়ে পড়েন।
আরও পড়ুনঃ অরক্ষিত ফুটপাত, আ’শ’ঙ্কা’জনক অবস্থায় হাসপাতালে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী, প্রতিবাদে মানববন্ধন
একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত তথ্য হলো, রাশেদের দাদা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বান্দরবানের রাজাকার বাহিনীর অন্যতম প্রধান ছিলেন বলে জানা যায়। রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে এই পারিবারিক পরিচিতিরও প্রভাব আছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
রাশেদের বিরুদ্ধে অতীতেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে তার সম্পদের উৎস ও অপকর্মের ফিরিস্তি উঠে আসে। এসব বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া, কোটা সংস্কার ও ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লব’-এ অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রাশেদের বিরুদ্ধে।