
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু)’র ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের উক্তি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বকভাবে উপস্থাপনের ভিডিও তৈরির ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, আটজন শিক্ষার্থী একসাথে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বে শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ বিজয় অর্জনের আশ্বাসে বিজয় উল্লাস হিসেবে ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ উক্তিকে ব্যাঙ্গাত্বকভাবে উপস্থাপন করেন। তবে ঐ শিক্ষার্থীদের দাবি ভিডিওটি কাঁটছাট করে প্রচার করা হয়েছে।
জানা যায়, ভিডিওতে থাকা আট শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।
এ নিয়ে ফেসবুকে ঢাবি ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খান লেখেন, পাঁচজন শহীদের রক্তে ভেঁজা ঐতিহাসিক এই লাইনটুকুও শিবিরের উগ্রতা থেকে রেহাই পায়নি। আমি বিশ্বাস করি এই উগ্রতায় পুরো জাতি লজ্জিত হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা লেখেন, কথাটাতে ভুল কই? MD.Abidul Islam Khan জুলাই এর উত্তাল সময়ে ৫ আগস্টে গুলিবর্ষণের মধ্যে বলেছিলেন ‘প্লিজ, কেও কাওকে ছেড়ে যাবেন না’। কিন্তু আমরা কেও একসাথে থাকতে পারিনি। সবাই বিভক্ত হয়ে গেছে। গুজব, হিংসা, অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। তাই বলে কি অভ্যুত্থান মিথ্যা হয়ে যায়? ঐক্যের বাণী মিথ্যা হয়ে যায়? এটাই প্রশ্ন রেখে যাব আপনাদের কাছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদী লেখেন, এইসব স্টুপিডিটি বন্ধ করতে হবে। আবিদের রাজনীতি আপনার পছন্দ না হতে পারে। কিন্তু সে জুলাইয়ের নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা। তার বক্তব্যটা জুলাইয়ের অনবদ্য দলিল।
ছাত্রদল নেতা শেখ তানভীর বারী হামিম লেখেন, “প্লিজ,কেউ কাউকে ছেড়ে যেয়েন না” বাংলা ব্যাকরণে একটি অনুরোধসূচক বাক্য কিন্তু এর প্রভাব আন্দোলের সেই মুহুর্তে ছিলো অসীম। আমি সকলকে অনুরোধ করবো- ‘বহু মানুষের রক্ত,অনেক পরিবারের অশ্রু ও আত্মত্যাগের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের কোন মুহুর্তকে নিয়ে ব্যঙ্গ করবেন না।এটা জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জার।মনে রাখবেন ব্যক্তি থেকে দল বড়,দল থেকে দেশ!’
এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করে লেখেন, কাদের ভাই যেভাবে জুলাইকে (৯ দফার ঘোষক বলে) বিক্রি করে ভোট বাড়াতে চেয়েছে।তেমনি আবিদ ভাইও জুলাইয়ে বলা টার্মকে ব্যবহার করে ভোট কাস্ট করতে চাইছে। সাক্ষাতকার, প্রচারণা, টকশো সর্বত্র নিজেকে নিজেই হিরো হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। কার কি অবদান সেটা তো সবাই জানে। সবার অবদানের প্রতিই জুলাইয়ের যোদ্ধারা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু অবদানকে পুঁজি করে কিছু করাকে মানুষ এখন ৭১ এর চেতনাকে বিক্রির সাথেই তুলনা করে। এবার সেটা যেই করুক না কেন! সেটাকে স্যাটায়ার করেই হয়তো ভিডিওটা বানিয়েছে। তবে এটা কাট ভিডিও, শুরুর অংশে সাদিক কায়েম পাকিস্তানি বলা বামদের শ্লোগানকে আনা হয়েছিল। তবুও এমন ভিডিও না বানালেই ভালো হতো।
আরও পড়ুনঃ সাজিদ হত্যা মামলার তদন্তভার সিআইডি’কে হস্তান্তর
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জড়িত এক শিবিরকর্মী জানান, ভিডিওটা তো আংশিক কেটে দিয়েছে। সেখানে মেঘ মল্লার বসুকে ব্যঙ্গ করে ‘তুমিও জানো আমিও জানি, সাদিক কাইয়ুম পাকিস্তানি’ স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জুলাই সংশ্লিষ্ট আবিদ ভাইয়ের অবদানকে কটাক্ষ করার চিন্তা থেকে এই ভিডিও তৈরি করিনি। মূলত নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি যে ভঙ্গিতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন ওই বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে। জুলাইয়ে কারো অবদানকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তবুও এই ভিডিও দেখে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ানী সরকারের পতনের পূর্ব মুহূর্তে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের নেতা আবিদুল ইসলাম খান আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্লিজ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না।’ তার এ আহ্বান আন্দোলনকারীদের শক্তি, সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনে ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ উক্তির জনক বলে প্রচার-প্রচারণা করেন তিনি। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা যায়।