
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর রেশম বোর্ডের আওতাধীন কয়েকটি পুকুর নিয়ে উঠেছে অনিয়ম, দখল ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ। সরকারি এই জলাশয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাবিত ব্যক্তিদের লিজে পরিচালিত হয়ে আসছিল। সম্প্রতি এসব পুকুরে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ও মাছ ধরার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে— সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা কার হাতে?
সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববর্তী সরকার আমলে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে রেশম বোর্ডের পুকুরগুলোর টেন্ডার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন।
অভিযোগ রয়েছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অন্য কাউকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। ওই টেন্ডারপ্রাপ্তরা কয়েকজন পার্টনার মিলে চাষ শুরু করেন এবং স্থানীয় এক জেলে ওবায়দুলকে পুকুর দেখাশোনার দায়িত্ব দেন।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর লিজগ্রহীতারা আত্মগোপনে চলে গেলে পুরো দায়িত্ব চলে আসে ওবায়দুলের হাতে। এরপর থেকেই পুকুরে বহিরাগতদের প্রবেশ বাড়তে থাকে। গত ১০ অক্টোবর টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন বহিরাগত ওই সরকারি জলাশয়ে প্রবেশ করে মাছ ধরেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বহিরাগতরা বিনা বাধায় পুকুরে প্রবেশ করছেন। ওবায়দুল স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা ও এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর সহযোগিতায় পুকুর এলাকাটিকে ‘আড্ডা কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে আগের লিজগ্রহীতারা আবারও তিন বছরের জন্য লিজ নবায়নের আবেদন করেছেন। তারা দাবি করেছেন, আগের চাষে লোকসান হওয়ায় পুনরায় লিজ প্রয়োজন।
আরও অভিযোগ আছে, রেশম বোর্ডের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ওবায়দুলকে পরামর্শ দিয়েছেন— “আবেদনে বিএনপি নেতাদের স্বাক্ষর যুক্ত করলে সুবিধা হতে পারে।” এতে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি কর্মকর্তারা কি এখন রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করছেন?
রেশম বোর্ডের উপপরিচালক তারিকুল ইসলাম বলেন, “পুকুরে বহিরাগতদের প্রবেশের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাদের সিকিউরিটি গার্ডের অভাব রয়েছে, এজন্য এমনটি ঘটতে পারে। আমরা থানায় জানিয়েছি এবং নিরাপত্তা জোরদারের জন্য হেড অফিসে আবেদন পাঠিয়েছি।”
আরও পড়ুনঃ ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, ছাড় পায়নি জরুরি চক্ষু রোগীরাও
বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এ বিষয়ে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে যেহেতু এটি সরকারি সম্পত্তি ও নিরাপত্তার বিষয়, প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।”
রেশম বোর্ডের পুকুরে মাছ ধরতে আসা কয়েকজন শিকারি বলেন, “সরকারি জায়গা বলে ভেবেছিলাম এখানে বড় মাছ পাব, তাই টিকিট কেটে ঢুকেছিলাম। কিন্তু মাছ ছোট ও কম ছিল, আমরা প্রতারিত হয়েছি।”
রেশম বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুমন ঠাকুর জানান, “আমরা সরকারি নিয়মে নতুন টেন্ডারের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং বহিরাগতদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে।”
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি সম্পত্তি রাজনৈতিক দখলে চলে গেলে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। রাজশাহীর রেশম বোর্ড এখন প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনিক উদাসীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরাপত্তা শিথিলতার কারণে— যেখানে সরকারি সম্পদ রক্ষার চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থই প্রাধান্য পাচ্ছে।