spot_img

― Advertisement ―

spot_img

রামগঞ্জে দৈনিক “আমার দেশ” না আসায় পাঠকদের হতাশা

মো. মাসুদ রানা মনি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর বহুল প্রতীক্ষিত জনপ্রিয় পত্রিকা "দৈনিক আমার দেশ" প্রকাশিত হলেও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায়...
প্রচ্ছদসারা বাংলাবিপদসীমা অতিক্রম করল তিস্তার পানি, ২৫হাজার পরিবার পানিবন্দি

বিপদসীমা অতিক্রম করল তিস্তার পানি, ২৫হাজার পরিবার পানিবন্দি

সোহেল রানা, লালমনিরহাটঃ উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এর আগে গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বামতীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। প্রতিমুহুর্তে বাড়ছে এর সংখ্যা। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতে সিকিমের উৎপত্তিস্থল থেকে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করে তিস্তার পানি এককভাবে ব্যবহার করছে ভারত সরকার।

বর্ষাকালে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তারা তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়। এই উজানের ঢল ও ভা্রী বর্ষণে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই বর্ষাকাল শুরু হলেই তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয় পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে।

নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষীরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। মারাত্ম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। শনিবার রাতভর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর উপর দিয়ে অভার ফ্লো প্রবাহিত হয়। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার। পরে রাতের দিকে স্থানীয়রা বালু ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষা করে।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার এমদাদুল হক বলেন, রাতে পানির গর্জনে ঘুমাতে পারিনি। সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রীজ অংশের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এ সময় বাঁধ কাঁপতেছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম যে, স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছে। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক মজিদুল ইসলাম বলেন, দুই রাত থেকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। আমাদের গ্রাম পানিতে ডুবে আছে। নৌকা দিয়ে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির যোগাযোগ করতে হচ্ছে। ডুবে থাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। আমন ক্ষেত ডুবেছে বন্যায়। বেশি সময় এমন থাকলে ধান গাছ পঁচে নষ্ট হতে পারে।\

আরও পড়ুনঃ কেন্দুয়ায় বেখৈরহাটী বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসক

একই গ্রামের আব্দুর রশিদ ছোট বলেন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে হাটু পানি। বাচ্চা বৃদ্ধদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে পড়েছি। শুকনো খাবার প্রয়োজন হলেও এখন পর্যন্ত আসেনি। এবারের বন্যায় তেমন কেউ খবর নিতেও আসেনি।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিন/সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুকনো খাবার এখন পর্যন্ত বরাদ্ধ আসেনি। বরাদ্দ এলে পৌঁছে দেয়া হবে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ৩ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষদের নিয়ে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎ সীমার ২ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেয়া হবে। একই সাথে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয় সেটা নজরদারী করে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিস্তা নদী বিপৎ সীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা বাড়লে তা মোকাবিলা করতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।