আগারগাঁও এলাকায় অফিস শেষ করে শিশু মেলার সামনের ওভার ব্রিজ দিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য উঠছিলেন ছন্দা আক্তার (ছদ্মনাম)। এ সময় এক যুবক তাকে ধাক্কা মারে। পাশে থাকা আরেক যুবক মুহূর্তেই তার ব্যাগে হাত দিয়ে আইফোন বের করে নেয়। এরপর সেই যুবক দেয় ভোঁ-দৌড়। কিন্তু ছন্দাও নাছোড়বান্দা। সেই যুবকের পিছু নিয়ে ছুটতে থাকে। এক সময় ওভারব্রিজের ওপর ধরে ফেলেন। ছন্দা এবার চিৎকার শুরু করলে লোকজন এগিয়ে আসে। পরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। শেষে সেই নারী তিন ছিনতাইকারীকে নাজমুল নামে এক পুলিশের এসআই এর হাতে সোপর্দ করেন।
রোববার (১২ মে) সন্ধ্যায় এমন ঘটনা ঘটে। ছন্দা নামের সেই নারীর সাহসিকতায় তিন ছিনতাইকারী ধরা পড়লেও তাদের আর খোঁজ মিলছে না। এমনকি বিষয়টি নিয়ে তিন থানায় চলছে ঠেলাঠেলি। তবে কেউই স্বীকার করছে না, কোন থানার পুলিশ সেই নারীর কাছ থেকে তিন ছিনতাইকারীকে বুঝে পেয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন সেই নারী। নিরাপত্তার শর্তে তিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।
আরও পড়ুনঃ খতনা করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার প্রতিবেদন আগামী ২৬ জুন
ভুক্তভোগী নারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমি নিজে একজন ছিনতাইকারীকে ধরেছি। তাদেরকে আমিসহ লোকজন ব্যাপক মারধর করেছে। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। নাজমুল নামে একজন এসআই ছিল সেখানে। তিনি তাদের বুঝে নেন। তিনি আমাকে মামলা দিতে বলেছিলেন। যেহেতু আমি সরকারি চাকরি করি। নিয়মিত উপস্থিত থেকে মামলা চালানো কঠিন। ফলে মামলা করতে চাইনি। সেখান থেকে চলে আসার পর তিন ছিনতাইকারীকে পুলিশ কি করেছে বলতে পারছি না।
তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। শিশু মেলার সামনের ওভার ব্রিজে ওঠা মাত্র এক যুবক তাকে ধাক্কা দেন এবং আরেক যুবক তার ব্যাগ খুলে আইফোন নিয়ে দৌড় দেয়। তিনি তার পিছু পিছু ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলেন। ওই সময় আরও দুই ছিনতাইকারী সেখানে উপস্থিত হলে তিনি লোকজনের সহায়তা চান। এরপর তিনজনকে ধরতে সক্ষম হন। এর মাঝে একজন পালিয়ে যায়। তারা চারজন ছিল বলে তিনি জানতে পারেন। তাদেরকে ধরার পর তিনিসহ উপস্থিত জনগণ ব্যাপক গণধোলাই দেয়।
তিনি আরও বলেন, 'কিছুক্ষণ পর পাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা ছুটে আসেন। এরপর তিনি তাদের হাতে ৩ ছিনতাইকারীকে তুলে দেন। কিন্তু এ নিয়ে তিনি কোনো মামলা করেননি। পুলিশকে বলেছেন, আপনারা যা ভালো বুঝেন করেন। সেখান থেকে সোজা তিনি বাসায় চলে যান।'
ভুক্তভোগী নারীর বর্ণনা মতে, তিন ছিনতাইকারীর বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। ঘটনাস্থলটি ছিল শিশু মেলা ওভারব্রিজ। তিনি পূর্ব দিক থেকে ওঠার সময় আক্রান্ত হন। পরে ধাওয়া দিয়ে পশ্চিম পাশে গিয়ে তাদের ধরে ফেলেন।
তবে একজন নারী হয়ে তিন ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলায় উপস্থিত জনগণ তার সাহসিকতায় বেশ অবাক হন। তিনি শুধু তাদের ধরেননি ব্যাপক উত্তম মাধ্যমও দেন। পরে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনার পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করা তিন ছিনতাইকারি ছাড়া পেলে তার কোনো ক্ষতি করে কিনা সেই আশঙ্কায় আছেন তিনি।
এরপর শুরু হয় খোঁজখবর নেওয়া। প্রথমে কল করা হয় শেরেবাংলা থানায়। শেরেবাংলা থানার ওসি আব্দুল আহাদ বিষয়টি শুনে প্রথমে জানান, এমন ঘটনা তার থানা এলাকার মধ্যে ঘটলে তিনি জানতেন। এ সময় তিনি এসআই এর নামটি জানতে চান। পরে সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম নাজমুল জানালে তিনি বলেন, এ নামে তার থানায় কোনো পুলিশের এসআই নেই।
দ্বিতীয় ধাপে কল করা হয় আদাবর থানায়। আদাবর থানার ডিউটি অফিসার নাজমুল নামে কোন এসআই নেই বলে জানান। কিন্তু তার ওপর ভরসা পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর কল করা হয় আদাবর থানার ওসি মাহবুবুর রহমানকে। তিনি ঘটনাটি শুনে বলেন, ঘটনাস্থল তার এলাকার মধ্যে নয়। এটি মোহাম্মদপুর থানার মধ্যে পড়েছে। হয়তো তাদের কোনো টিম সেই তিন ছিনতাইকারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে।
এবার তার কথার সূত্র ধরে মোহাম্মদপুর থানায় কল করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার ওসি ঘটনাস্থল এবং ঘটনার বর্ণনা শুনেন। সাথে পুলিশের কোন এসআইয়ের হাতে তাদের তুলে দেওয়া হয়েছে তার নামটি জানতে চান। পরে জানান, নাজমুল নামে তার থানায় একজন এসআই কর্মরত আছেন কিন্তু আজ তার কোনো ডিউটি ছিল না।
সবশেষে আবারো কল করা হয় শেরেবাংলা থানার ওসিকে। এবার ওসি আব্দুল আহাদ বলেন, আমি সেখানে খোঁজ নিয়েছি। আমার এক সদস্য জানিয়েছে, শিশুমেলার সামনে থাকা পুলিশ বক্সের আশপাশে এমন ঘটনা ঘটেনি। তারা কোন আসামি বুঝে পায়নি। তবে অন্য কোনো থানা পুলিশ তাদের বুঝে পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যদি সেই নারী মামলা নাও করে থাকেন পুলিশের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সেই থানার সংশ্লিষ্টরা।