spot_img

― Advertisement ―

spot_img

জাতীয় নাকি স্থানীয় নির্বাচন: কোনটি আগে জরুরি?

নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে মানুষের আগ্রহ, আবেগ ও অংশগ্রহণের মাত্রা এক অনন্য সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অলিগলি—সর্বত্রই নির্বাচন ঘিরে জমে ওঠে...
প্রচ্ছদকলামড. জহুরুলের হাত ধরে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষায় প্রথমবারের মতো এলএমএস ভিত্তিক শিক্ষক...

ড. জহুরুলের হাত ধরে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষায় প্রথমবারের মতো এলএমএস ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ

সম্প্রতি আমি জাতীয় সংবাদপত্র এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি সংবাদ দেখতে পাই। ২৪মে, ২০২৫ কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যানভাস এলএমএস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভার্চুয়াল মুডের মাধ্যমে তাদের প্রথম অনলাইন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধন করে।

প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি আটটি বিশেষায়িত মডিউলে শিক্ষাগত উৎকর্ষতা এবং প্রযুক্তি-সমন্বিত ইন্সট্রাকশন বৃদ্ধির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নীতিশাস্ত্র, শেখার তত্ত্ব, শিক্ষাদান কৌশল, মূল্যায়ন, প্রেরণা, ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইন, প্রযুক্তি একীভূতকরণ এবং একাডেমিক স্বীকৃতি (এক্রিডিটেশন)।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যানভাস এলএমএস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একটি সম্পূর্ণ অনলাইন, সেলফ-পেইসড শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডেকোটায় গবেষণারত এবং রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, একজন ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইনার এবং শিক্ষা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম ক্যানভাস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কোর্সটি ডিজাইন এবং উন্নয়ন করেছেন। আগামী ২ মাস ধরে চলা এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির তত্ত্বাবধানে থাকবেন তিনি। এই অগ্রণী উদ্যোগটি উচ্চশিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত, যা শিক্ষকদের নমনীয়, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা উন্নয়নে নিযুক্ত করতে সক্ষম হবে। বিশ্বব্যাপী মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তৈরি এই কর্মসূচিটি।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যপট জুড়ে শিক্ষাদান ও শেখার ক্ষেত্রে একাডেমিক উদ্ভাবন, ডিজিটাল রূপান্তর এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। ড. জহুরুল ইসলাম কেবল একজন শিক্ষক নন; তিনি একজন চিন্তাবিদ এবং ভবিষ্যৎ নির্মাতা। তিনি আধুনিক শিক্ষা ও গবেষণা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাদানের উন্নয়নে অব্যাহতভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি-সমন্বিত প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরিতে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি দায়িত্বশীল এবং প্রযুক্তি-বান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যার মধ্যে একটি বিজ্ঞান ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, সেন্টার ফর ইনোভেশন এবং সামাজিক সম্পৃক্ততা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

শিক্ষা কেবল জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার। এবং এই পরিবর্তনের অন্যতম ভিত্তি হল প্রযুক্তি। বিশ্বজুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তি যখন নতুন রূপ নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশের কিছু অগ্রণী শিক্ষক ও গবেষকও এই ধারা সফলভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম তাদের একজন উজ্জ্বল
প্রতিনিধি, যিনি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে একীভূত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে ‘মুখস্থকরণ’-ভিত্তিক পুরনো ধারার পাশাপাশি, বর্তমানে ব্যবহারিক অনুশীলন, প্রযুক্তির মাধ্যমে শেখা এবং অংশগ্রহণমূলক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা যায়। এই উদ্দেশ্যে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মুট কোর্ট গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা কোর্টরুম সিমুলেশনের মাধ্যমে আইন পেশা সম্পর্কে হাতে কলমে অভিজ্ঞতা অনুশীলন করতে পারে। একই সাথে, তিনি একটি আইন ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেন, যেখানে তারা শ্রেণীকক্ষের বাইরেও একজন প্রকৃত আইনজীবীর মতো ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তিনি তার নিজস্ব বিভাগে আইন শিক্ষায় এই বিপ্লবী পদক্ষেপ নেন। তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডিজিটাল সেমিনার লাইব্রেরি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং একটি ইন্টারনেট-সংযুক্ত কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছেন।

শুধু অবকাঠামোই নয়, ড. জহুরুল পাঠ্যক্রম উন্নয়নেও অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে আইনি শিক্ষার ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো একটি সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রমের স্বাদ পেয়েছিল। সেই সময়ে সংবাদপত্রে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

তিনি যে পাঠ্যক্রমের বিন্যাস তৈরি করেছিলেন তা পরবর্তীতে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বস্তুনিষ্ঠ পাঠ্যক্রম প্রণয়নে অনুসরণ করা হয়েছিল। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশে সুশাসন আইনের পাঠ্যক্রম প্রণয়ন এবং পড়ান, যা আজ বাংলাদেশে প্রশাসনিক আইন শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তাছাড়া, তিনি আইনি শিক্ষার কার্যকর পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য ‘প্রব্লেম হ্যান্ডবুক’ এবং ‘কেস ল হ্যান্ডবুক’ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়বস্তু তৈরি, উপস্থাপন এবং বিচারের জন্য বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন লেখার সুযোগ তৈরি করেছিল, যা আধুনিক শিক্ষার সূচনা করেছিল।

ড. জহুরুল ইসলাম একজন স্ব-প্রণোদিত ব্যক্তি যিনি সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। তার অন্তর্নিহিত প্রেরণার গল্প বিরল। আইন শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও, তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডেকোটায় ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছেন। তিনি ইতিমধ্যেই ই-লার্নিং এবং ওয়েব-ভিত্তিক (এলএমএস) লার্নিং-এর উপর বেশ কয়েকটি প্রকল্প সম্পন্ন করেছেন, বেশ কয়েকটি ইন্সট্রাকশনাল ভিডিও প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের অনেক তরুণ তার ওয়েব-ভিত্তিক ক্যারিয়ার পোর্টফোলিও কোর্স সম্পন্ন করে তাদের পেশাদার ই-পোর্টফোলিও তৈরি করেছেন।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে আইন শিক্ষায় ফ্যাকাল্টি ইফিকেসি এবং প্রযুক্তি একীকরণের উপর গবেষণাও পরিচালনা করছেন। এই গবেষণার মাধ্যমে, বাংলাদেশে আইন শিক্ষকদের প্রযুক্তি ব্যবহার এবং দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি ২০-২৫ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত আসন্ন এইসিটি এর আন্তর্জাতিক কনভেনশনে তিনটি অত্যাধুনিক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করবেন যার দু’টিতেই তিনি ফার্ট অথর।

আরও পড়ুনঃ সাতক্ষীরা দেবহাটার পারুলিয়াতে জমে উঠেছে  কোরবানির পশুর হাট

তিনটি উপস্থাপনা একই সাথে একত্রে প্রদান করা হবে, যা আইনি শিক্ষা এবং ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইনে ড. জহুরুলের চলমান অবদানের একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডেকোটায় আইআরবি (ইন্সটিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড) প্রোটোকল জমা দেওয়ার মাধ্যমে ফিল্ড স্টাডির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা হল আইনি শিক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার। সেখানে তিনি শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের মতামত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আদালতে সাক্ষ্যদান এবং বিচার প্রক্রিয়া শেখানোর ক্ষেত্রে কীভাবে কার্যকর হতে পারে। এই গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে যে পরিকল্পনা এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে আইন শিক্ষায় নতুন প্রযুক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

তার গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও মূলত প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষকদের মানসিক প্রস্তুতির উপর নির্ভরশীল। তিনি বিশ্বাস করেন যে পাঠ্যক্রমের মধ্যে প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে, শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং প্রশাসনিক নীতিতে ডিজিটাল শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসোসিয়েশন ফর এডুকেশনাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড
টেকনোলজির মতো একটি বিখ্যাত পেশাজীবী সংস্থা তাকে ম্যাকজুলিয়ান পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

ড. জহুরুল ইসলামের কাজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি দেখিয়েছেন যে প্রযুক্তি কেবল উন্নত বিশ্বের জিনিস নয়, সঠিক পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে এটি আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।উচ্চশিক্ষায় এই প্রযুক্তি-ভিত্তিক নতুন যাত্রা নিঃসন্দেহে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আরও দক্ষ, আধুনিক এবং মানবিক করে তুলবে।

লেখকঃ
এম আই মিরাজ
শিক্ষানবিশ আইনজীবী, রাজশাহী জজ কোর্ট।