গ্রীষ্মের তাপদাহে পুড়ছে সারা দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়া। সূর্যের সাথে নিকটতম কৌণিক দূরত্বের কারণে এপ্রিল আমাদের ঋতুচক্রে উষ্ণতম মাস। তবে ২০২৩ সালেরএপ্রিল মাসে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘতর সময় ধরে উচ্চ মাত্রার তাপদাহ চলতে দেখা গিয়েছে।
এ বছরেও তার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহের কারণের ব্যাখা নানা জন নানা ভাবে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক একটি কারণের কথা কাউকে উল্লেখ করতে শুনছি না। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সৌরজাগতিক যে ঘটনাচক্র চলমান এই তাপপ্রবাহের জন্য মূল কারণ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা, তার নাম সোলার সাইকেল বা সৌর চক্র। সোলার সাইকেল সাধারণত এগার বছর ধরে চলে এবং একটি চক্র শেষ হলে আরেকটি চক্র শুরু হয়।
বলে নেওয়া ভালো যে সূর্য সব সময় সমান পরিমাণ গরম থাকে না। এগার বছরের এই সোলার সাইকেলগুলোর শুরুতে সূর্য অপেক্ষাকৃত কম গরম থাকে। কারণ এখানে সৌর বিক্রিয়াজনিত বিকিরণের ও সানস্পটের সংখ্যাও অপেক্ষাকৃত কম থাকে। এরপরে ধীরে ধীরে সৌর বিক্রিয়ার পরিমাণ ও সানস্পটের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর সে কারণে সূর্যের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে।
এভাবে সোলার সাইকেলের আনুমানিক অর্ধেক অতিক্রম করার সময়ে অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর নাগাত সূর্যের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়। এরপরে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং এগারতম বছরে সূর্যের তাপমাত্রা সবচেয়ে কম হয়। প্রতিটা সোলার সাইকেলের শেষে সৌরচুম্বকের মেরু দিক পরিবর্তন করে। অর্থাৎ উত্তর মেরু দক্ষিণ দিকে এবং দক্ষিণ মেরু উত্তর দিকে যায়। এবং নতুন একটা সোলার সাইকেল শুরু হয়।
এত কথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে আমরা এখন যে সোলার সাইকেলের প্রায় মাঝামাঝি পর্যায় অতিক্রম করছি সেটা শুরু হয়েছে ২০১৯ সালে এবং শেষ হবে ২০৩০ সালে (ছবিতে দেখুন)। সে কারণেই গত বছর ও এ বছরের গ্রীস্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি। ২০২৫-এ সূর্যের তাপমাত্রা আরও বেশি থাকার কথা; এর পরের বছরেও সূর্য যথেষ্টই গরম থাকবে। ২০২৭ সাল থেকে সূর্যের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
আরও পড়ুনঃ দাবদাহে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রাইমারি,মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ
প্রসঙ্গত, সব সোলার সাইকেলের শক্তিমাত্রা সমান হয় না। সবশেষে উল্লেখ্য, বাতাসের তাপমাত্রা কমা-বাড়ার পেছনে একটি নয়, বরং একাধিক কারণ থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বিলম্বিত মৌসুমি বায়ুজনিত অনাবৃষ্টি এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে সারা দেশ জুড়ে চলমান তাপদাহ আরও বেশি মাত্রায় অনুভূত হচ্ছে। আর গাছপালা ও জলাশয়ের অভাব এবং মোটরচালিত যানবাহন ও এসি থেকে নির্গত তাপের কারণে ঢাকার মতো অপরিকল্পিতভাবে ক্রমবর্ধনশীল শহরগুলিতে এই তাপদাহ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
লেখক:
ড. বিশ্বাস করবী ফারহানা
বায়ুমণ্ডল ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়