
শব্দের মাধ্যমে রোগ নিরাময় একটি প্রাচীন পদ্ধতি, যা আধুনিক যুগে এসে নতুন করে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাউন্ড থেরাপি নামক এই পদ্ধতি শরীর ও মনের নানা সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। এটি শুধুমাত্র শারীরিক উন্নতিই নয়, বরং মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশার মতো জটিল সমস্যারও কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বহু শতাব্দী ধরে শব্দকে রোগ নিরাময়ের একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তখন এটি মূলত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ ছিল। বর্তমান যুগে এটি গবেষণা ও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে আরও কার্যকর হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দের মধ্যে এমন শক্তি রয়েছে যা মন ও শরীরকে আরাম দিতে পারে। শব্দের মাধ্যমে মানসিক শান্তি আনার পাশাপাশি এটি শারীরিক রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
সাউন্ড থেরাপির কার্যকর পদ্ধতি
১. ভ্রমরী প্রাণায়াম (Bhramari Pranayama):
মৌমাছির মতো গুনগুন শব্দ করতে হয় এই প্রাণায়ামে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সোজা হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে হাতে চোখ ঢেকে ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
২. মন্ত্রোচ্চারণ (Chanting):
‘ওঁ’ বা নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে মন শান্ত করা যায়। মন্ত্রোচ্চারণের নির্দিষ্ট ছন্দ শরীরের নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং নতুন উদ্যমে ভরিয়ে তোলে।
৩. টোনিং সাউন্ডস (Toning Sounds):
শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গের জন্য নির্ধারিত শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ:
কান: “Nnn”
চোখ: “Eemm”
ফুসফুস: “Ssss”
সাইনাস: “Mmm”
৪. সিংগিং বোলসের ব্যবহার:
ধাতব পাত্রের মাধ্যমে সৃষ্ট ধ্বনি মন ও শরীরকে শিথিল করে। এটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন থেরাপি সেন্টার, মেডিটেশন সেন্টার এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশেও সাউন্ড থেরাপি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি চোখে কম দেখা, মানসিক চাপ, গ্যাস্ট্রিক, খাদ্যে অরুচি, অস্থিরতা এবং এমনকি আত্মহত্যাপ্রবণ মনোভাব কমাতে সহায়ক।
আরও পড়ুনঃ কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ও নাগরিক কমিটির লিফলেট বিতরণ
সাউন্ড থেরাপি বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে বিশেষত স্কুল, মেডিটেশন সেন্টার, এবং মাদক নিরাময় কেন্দ্রেও কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাউন্ড থেরাপি গবেষক মো. শোয়েব হোসেন বলেন, “মেডিটেশনের মাধ্যমে যে উন্নতি সম্ভব, সাউন্ড থেরাপি তার থেকেও কার্যকর হতে পারে। এটি মনকে শান্ত ও শরীরকে উদ্যমী করে তোলে।”
সাউন্ড থেরাপির এই চর্চা আধুনিক চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা প্রাচীন এবং আধুনিক পদ্ধতির সমন্বয়ে মানব কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
লিখেছেন মো: শোয়েব হোসেন
সাউন্ড থেরাপি গবেষক,
সংগীত শিক্ষক ও কণ্ঠশিল্পী।