
মো: মাহিদুজ্জামান সিয়াম, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাভার ক্যান্টঃ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহীদ সাফওয়ান আক্তার সদ্য’র বাবা বলেন, ‘দেশ যেদিন নতুন করে স্বাধীন হলো সেদিন আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি। আমার ছেলে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা সকল দিক থেকে অলরাউন্ডার ছিলো।’
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সাভারের নিরিবিলি এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া ও অংশ্রগ্রহণকারীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এসব বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আমার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতো, আন্দোলনে যাওয়ার জন্য অনেক বায়না করতো। ছোট হওয়ায় তাকে বাধা দিতাম, তাও সে ছাদে উঠে মিছিল দেখতো। যেদিন ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি আসলো সেদিন আমার ছেলেকে নিতে সাভারের পাকিজা পর্যন্ত যাই, সেখানে আমার ছেলের সাথে যতগুলো মানুষ লাশ হয়েছিলো তাতে আমার মনে হয় নিহতের সংখ্যা হাজারের উপরে। এই আন্দোলনে ১৪ দলিয় জোটের লোক ছাড়াও সকল স্তরের সাধারণ জনতা ছাত্রদের ব্যানারে অংশ নিয়েছিলো। আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া উচিৎ এবং আহতদের জরুরী ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন জানাচ্ছি। আশাকরছি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশ সংস্কার করে সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন ও গনতান্ত্রিক সরকারের হাতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধামরাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মোঃ রকিব দেওয়ান রকি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাকিল আহমেদ ও আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক।
বিশেষ অতিথি মোঃ শাকিল আহমেদ বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিলো মূলত সেদিন, যেদিন ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদের রাজাকার ও রাজাকারের নাতিপুতি বলে আক্ষায়িত করেন। এরপর থেকে আমরা দেখতে পাই ওবাইদুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হেলমেট ও পেটুয়া বাহিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো শুরু করে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও দেশের আপামর সাধারণ জনতার গণজোয়ারকে আটকানো সম্ভব হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে লাগাতার কর্মসূচিতে ৫ই আগস্ট খুনি হাসিনা হেলিকাপ্টার যোগে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়। জুলাইয়ের রক্তাক্ত গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি, এই স্বাধীনতা আমরা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সর্বদা সচেতন থাকবো।’
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি গভির শ্রদ্ধার-কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধান অতিথি মোঃ রকিব দেওয়ান রকি বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর যাবত অনেক দল আন্দোলন সংগ্রাম করলেও সফলতার মুখ আমরা দেখিনি। তবে আমাদের ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ফলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে, দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। নবীনগরে আমার ছাত্র ভাইদের উপরে যখন গুলি ছোড়া হয়েছিলো, লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামিলীগের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়েছিলো আমি তা খুব কাছ থেকে দেখেছি। সরাসরি গিয়ে তাদের সাহায্য বা দিকনির্দেশনা দিতে না পারলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তারা দীর্ঘ ৩/৪ ঘন্টা যাবত জালালাবাদ, কুটিরশিল্প, ডিওএইচএস অঞ্চল গুলোতে আটকা ছিলো। আমরা এই কষ্টের দিনগুলো অতিক্রম করেছি।’
আরও পড়ুনঃ মিরসরাইয়ে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ ও অফিস উদ্বোধন
এসময় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা বাধা দিয়েছিলো তাদের আমরা রাজাকার বলেছি তাহলে এবারের আন্দোলনে যারা বাধা দিয়েছে তাদের আপনারা কি বলবেন? রাজাকার? তারা যদি রাজাকার হয়ে থাকে তাহলে তাদেরও ফাঁসি হওয়া উচিৎ? তাদের এদেশে থাকার কোন অধিকার আছে? যদি না থাকে তাহলে তাদেরও আমরা দেশ থেকে বিতাড়িত করবো, তাদের বিচারও হবে।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আশেপাশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ও শহীদদের অভিভাবক, এলাকাবাসী, স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেত্রীবিন্দ। অনুষ্ঠান শেষে আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়।