spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদসারা বাংলামেয়র কন্যা অর্নার অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজির সন্ধান

মেয়র কন্যা অর্নার অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজির সন্ধান

মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে পেছন থেকে ইশারা ও সন্ত্রাসীদের টাকা যোগান দানকারী অন্যতম একজন দুর্নীতিবাজ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র কন্যা আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা। সাবেক মেয়র কন্যা অর্নার দুটি  গ্রুপের মাধ্যমে রাজশাহীতে বিশাল চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। 

এই দুটি নেটওয়ার্ক বা  গ্রুপের মাধ্যমে সে শহরের  বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, ঠিকাদার, নিয়োগ বাণিজ্য, বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে  বিপুল পরিমাণ চাঁদা প্রতিমাসে সংগ্রহ করত। দুইটি গ্রুপের প্রধান এ এস এফ বাহিনী ২য় গ্রুপ সরকারি নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা বাংলার জনপদের সাংবাদিকরা। অর্না জামান এমন একজন ছিলেন যার পা ধরে সালাম না করলে ছাত্রলীগের পদ কারো কপালের জুটত না। এমনকি মেয়ের নিরাপত্তার জন্য এএসএফ বাহিনীর হাতে নিজস্ব ওয়াকিটকি দিয়ে রেখেছিল সাবেক মেয়র। 

তথ্য নিয়ে জানা যায়, তার প্রথম গ্রুপের নাম হলো  এ এস এফ বাহিনী। যার  প্রধান কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বিপু ও বিস্ময়। এই দুইজনার অধীনে আরো কয়েকজন  সদস্য কাজ করতো । তাদের মধ্যে ১/ এস এম ইউনুস আলী অন্ত, সাধারণ সম্পাদক, বরেন্দ্র ভার্সিটি ছাত্রলীগ ২/ শাওন, সাবেক সভাপতি, বরেন্দ্র ভার্সিটি ছাত্রলীগ ৩/কাইয়ুম, সাবেক উপদেষ্টা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ৪/ পিয়ারুল পাপ্পু, সাবেক সভাপতি, বোয়ালিয়া  থানা ছাত্রলীগ ৫/ এ এস এফ এর প্রধান সদস্য তরিকুল ইসলাম বনি, সাবেক সহ-সভাপতি, বারিন্দ্র  মেডিকেল কলেজ, ছাত্রলীগ। এ এস এফ প্রতিষ্ঠা করেন ও নামকরণ করেন খোরশেদ আলম সাগর, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ লাইন শাখা। 

প্রথম  গ্রুপের প্রধান কাজ হল ফান্ড কোথায় থেকে রিকভারি করবে বা কালেকশন করবে সেটা নির্ধারণ করা। ফান্ড কালেকশনের ক্ষেত্রে তারা কিছু সরকারি কর্মকর্তা, বড় বড় ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, নিয়োগ বাণিজ্যের দিকে দৃষ্টি দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তারা সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের  সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা খুঁজে বাহির করে এবং কর্মকর্তার কাছে মোটা অংকের  মাসিক চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি  জানালে, চাকরি হারানোর ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হতো।  সমাধানের উপায় হিসেবে মেয়র কন্যার মোবাইল নাম্বার দেয়া  হতো।

চাঁদা আদায়ের পর তারা দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে তথ্য সরবরাহ করত। দ্বিতীয় গ্রুপে থাকতো “দৈনিক বাংলার জনপদ” অনলাইন পত্রিকার  রাজশাহীর সাংবাদিকবৃন্দ । দ্বিতীয় ধাপে এই সাংবাদিকরা আবার সেই প্রতিষ্ঠানে যায় এবং ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। কর্মকর্তা উপায়োত্তর না পেয়ে, মেয়র কন্যার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং মেয়র কন্যা সাক্ষাতে সব কথা বলা ও শোনা যাবে মর্মে সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেন। সাক্ষাতে সেই কর্মকর্তার কাছে কিছু কম টাকা নিয়ে সমস্যা  সমাধান করে দেন। এভাবে সে প্রতি মাসে একই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা  দুটি গ্রুপের মাধ্যমে উত্তোলন করতে বলে তথ্য পাওয়া যায়। 

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মেয়র ও মেয়রের মেয়েকে ম্যানেজ না করে রাজশাহীতে চাকরি করা কারো পক্ষেই সম্ভব না।ঠিকারদের নিকট চাদা আদায়ের কৌশল: ঠিকাদারদের কাজের ৩০ শতাংস সম্পন্ন হওয়ার পর প্রথম দল ঠিকাদারের কাজের স্পট পরিদর্শন করে এবং কাজের গুনগত মান ও সময়সীমা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন করে। কাজের ভুলত্রুটি তুলে ধরে মোটা অংকের চাদা দাবী করে। চাদা দিতে অস্বীকৃত জানালে, তারা মেয়র কন্যার  সংগে যোগাযোগ করতে বলেন এবং নির্দিষ্ট সময় বেধে দেন। তানা হলে কাজ বন্ধ করে  দেয়ার হুমকি প্রদান করেন।মেয়র কন্যার চাদা আদায় সম্পন্ন হলে দ্বিতীয় দল একই নিয়মে পুনঃরায় ঠিকাদারের কাছ থেকে চাদা নেয়। একজন ঠিকাদর বলেন, এসব চাদা আদায়ে বিষয়ে মেয়রের  সংগে কথা বলে কোন সুরাহা পাননি।

আরও পড়ুনঃ দেবহাটায় সহকারী শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন: আহবায়ক গোলাম ফারুক, সদস্য সচিব রুহুল আমিন 

নিয়োগ ব্যানিজ্য  কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মেয়রের পরিবার। কথিত আছে, রাজশাহীর মেয়র কন্যা অর্না জামান মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,কর্মচারী নিয়োগে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মচারী ও ভর্তি ব্যানিজ্যের সংগে সম্পৃক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে  দল ও অর্থের বিবেচনা দুটোই দেখতেন।তবে অর্থের বিবেচনায় দল ও যোগ্যতার মাপকাঠিকে উপেক্ষা করতেন। প্রতি ৩ জন শিক্ষকের বিপরীতে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

 একজন শিক্ষক বলেন, অফিস, চেয়ার,টেবিল এবং ক্লাস ছাড়াই আমরা শিক্ষক।গত চার বছরে ২০০ জন অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাতে আগামী ৩০ বছরে শিক্ষক দরকার হবে না।তথ্য মতে, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে মেয়র কন্যা প্রতিবছর ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা রোজগার করতেন। 

আরও তথ্য নিতে যেয়ে মেয়র কন্যার টর্চার সেলর সন্ধান পাওয়া গেছে। সাবেক ক্রিকেটার পাইলটের  বাড়ির সামনের বাড়ি  যুবলীগ নেতা রাজিবের বাড়িতে টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া যায়। রাজনীতিতে মেয়র কন্যার অবস্থান এবং তার ব্যক্তিত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যরা নিয়মিত ব্যানার, পোস্টার, পোস্ট বা শেয়ার না করলে তাদেরকে টর্চার সেলে এনে  নির্যাতন করা হতো।