মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়া দহ ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে জিম্মি করে টোল ও ভাড়া আদায়ের নামে প্রকাশ্যেই চলছে চাঁদাবাজি। প্রভাবশালী গোষ্ঠী লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছে।
এ নিয়ে প্রশ্ন করলেই স্থানীয়দের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তারা। দেয় হত্যার হুমকিও! এ অবস্থার উত্তোরণের জন্য মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বিদিরপুরঘাটে যান ভুক্তভোগী চরবাসী, শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক। এসময় শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগীদের প্রকাশ্যেই হুমকি দেয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যরা!
এদিকে, খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এসময় চাঁদাবাজরা গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কটুক্তিমূলক মন্তব্য করে। তবে সরাসরি কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। অথচ দু’দফায় গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘কে ভিডিও করছে? আমরা এখানে ভিডিও করার জন্য আসি নি’। সাংবাদিকরা পরিচয় দিলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ার ভিডিও ধরণের সময় তিনি আবারও বলেন, ভিডিও করছো কেন? ক্যামেরা অন কেন?
স্থানীয় ভুক্তভোগী, শিক্ষার্থী ও সমন্বয়কদের অভিযোগ, গত ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চরের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে যা খুশি করা হয়েছে। ইজারা ও ভাড়া আদায়ের নামে তারা চাঁদাবাজি করে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলেই যাত্রীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি তুলে কেউ পোস্ট করলে সে পোস্ট বাড়ি গিয়ে ডিলিট করানো হয়। দেয়া হয়, হত্যার হুমকিও। আর এই সিন্ডিকেটের পেছনে স্থানীয় এমপি, প্রশাসন, মেম্বার, চেয়ারম্যানরাও জড়িত ছিলো। একারণে ভয়ে কেউ কথা বলে না।
দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় এ অবস্থার উত্তোরণের উদ্যোগ নেয় চর আষাড়িয়া দহ ছাত্র-কর্মজীবী জোট। জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর সুরাহা করার উদ্যোগ নেন তারা। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ইজারা মূল্যের চার্ট টাঙাতে এসেছিলেন রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান। কথা ছিলো ভুক্তভোগীদের কথা শুনবেন তিনি। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণ মানুষের কথা শোনার কোন সুযোগ দেয় নি। বরং চটেছেন শিক্ষার্থী ও সমন্বয়কের উপর। করেছেন লাঞ্ছিতের চেষ্টাও।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তর্ক-বির্তকের এক পর্যায়ে নিয়মের মধ্যে ঘাট চালানো যাবে না বলে নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাফ জানিয়ে দেন ইজারাদার ইমন। একই সঙ্গে আগামী চার মাস (তাদের ইজারা চুক্তির সময় পর্যন্ত) তাদের ইচ্ছে মতো ‘চাঁদাবাজি’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় নির্বাহী কর্মকর্তা অনিয়ম করে ঘাট চালানো যাবে না বলে জানিয়ে দিলেও কোন ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি।
এসময় চরের এক বাসিন্দা নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে এমন মন্তব্য করলে ইমনের সঙ্গে থাকা চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের এক সদস্য তাকে নিয়ে কটুক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করলেই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। উত্তেজনা তৈরি হলে ওই ভুক্তভোগী যুবকসহ শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘প্রশাসন ছাড়া আছিস কেমন ক্ষমতা আছে দেখবো’।
আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় চাষ হচ্ছে ভিনদেশী ফুল লিলিয়াম
এসময় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ছাত্ররা বাপের একেবারে রাজত্ব পাইয়্যা লিয়্যাছে না কি? রাজত্ব পাইয়্যাছে? ওর (কটুক্তি শিকার ওই যুবককে ইঙ্গিত করে) কোন ক্ষমতা আছে? সরকারি লোক আছে বুল্যা—-!
পরে আবারও ওই ব্যক্তি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘সরকারি লোক ছাড়া তোদের কোন ক্ষমতা আছে? ডাকিস তো দেখি কয়টা লোক আছে।’
হুমকি দেয়া দুই ব্যক্তির একজন ইজাদার ইমনের বড় ভাই, যিনি রাজশাহী কোর্টের এক আইনজীবির সহকারী পরিচয় দিলেও অন্যজনের পরিচয় জানা যায় নি।
শেষে ঘাট থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান চলে আসার সময় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা ছিলেন। সবকিছু দেখেছেন, শুনেছেন। আমি এ বিষয়ে আর কোন কথা বলবো না।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গোদাগাড়ী উপজেলার স্থানীয় সমন্বয়ক মো. রহমত উল্লাহ মুুঠোফোনে বলেন, ঘাটগুলোতে ১৫ বছর লাঠিয়াল বাহিনী মানুষকে জিম্ম করে ইচ্ছেমতো যা খুশি করেছে। এখনো সাধারণ মানুষ আগের সে ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারে নি। তবে পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলি। এরই অংশ হিসেবে রোববার ঘাটে যাওয়া হয়েছিলো। সেখানে যে হুমকি দেয়া হয়েছে সেটা মোটেও কাম্য ছিলো না। আর নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন বোধ করি। তবে হয়তো আরও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়; একারণে হয়তো কথা বলেন নি।