খাঁন আহম্মেদ হৃদয় পাশা, সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার একমাত্র নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা আক্তার (৬৭) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বেলা ২টায় উপজেলার আন্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, তিন মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বিকেল ৫টায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এশার নামাজের পর জানাজার শেষে তাঁকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার এম ও গনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ফাতেমা আক্তার ছিলেন মাত্র ১২-১৪ বছরের কিশোরী। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া ফাতেমা সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল গ্রামে বড় হন। বাবা সিরাজ ও মা লালজানের অভাবী সংসারের একমাত্র আদুরে কন্যা ছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর সখীপুরের বহেড়াতৈল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে রান্নাবান্না ও পাহারার দায়িত্ব পালন করতেন ফাতেমা। মুক্তিযোদ্ধাদের বার্তা আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করতেন তিনি। নিরাপত্তার জন্য ছেলেদের পোশাক পরতে হতো এবং চুলও ছেলেদের মতো কেটে রাখা হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর দুঃখ-কষ্টে ভরা জীবনযাপন করতে হয় তাঁকে। প্রথম স্বামী সামাদ চার সন্তানসহ তাঁকে ছেড়ে চলে যান। পরে দ্বিতীয় স্বামী মোবারকের সঙ্গেও বিচ্ছেদ ঘটে। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের বড় করেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ শিবগঞ্জের আজমতপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক হাসপাতালে ভর্তি
স্বাধীনতার অনেক পরে (এরশাদ সরকারের সময়) তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান। সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ফাতেমা বেগম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কষ্টে-সৃষ্টে কাটিয়েছেন। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। মৃত্যুর আগে তাঁর ঠিকানা ছিল পৌর শহরের উত্তর পাশে আন্দি এলাকার একটি বনভূমির জমিতে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার এম গনি বলেন, “ফাতেমা বেগম সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।”
তাঁর মৃত্যুতে সখীপুরবাসী একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী নারীর চিরবিদায় অনুভব করছে।