
রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রাম জেলায় বালু ও মাটি বিক্রির অবৈধ উৎসব চলছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা এবং ধরলা নদীর পাড় কেটে মাটি এবং বালু বিক্রি করছে একাধিক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা সিন্ডিকেট। রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি, কৃষি জমি ধ্বংস, এবং জনজীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বালু ও মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্যের কারণে নদীর গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষত বুড়ী তিস্তা নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রির ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা, বন্যা, এবং ফসলহানির আশঙ্কা বেড়েছে। কৃষি ফসল নষ্ট হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে।
পূর্বের সরকার নদী খনন প্রকল্পের মাধ্যমে বুড়ী তিস্তাকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধী গোষ্ঠী খনন করা মাটি কেটে বিক্রি করে নদীকে আবার ভরাটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে বালু ও মাটি বিক্রির সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে।
বিগত সরকারের সময়ে: যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকা একটি গোষ্ঠী মাটি ও বালু বিক্রির নেতৃত্ব দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের সময়ে: বিএনপির নামে একটি সিন্ডিকেট এই কাজ চালাচ্ছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা এবং ধরলা নদীর পাড়ে একাধিক বালু মহল গড়ে উঠেছে। এসব পরিচালনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাবেক এমপি এবং তাদের সহযোগীদের নাম জড়িত রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান, তিস্তা নদী: উলিপুরের ধামশ্রেনী, গুনাইগাছ ব্রিজ এবং তবকপুর এলাকায় মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। চিলমারী: ফকিরের হাট এবং কাচকল এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। উলিপুর: হাতিয়া ইউনিয়ন এবং পালের ঘাটের বালু মহল পরিচালিত হচ্ছে বিএনপির নেতাদের তত্ত্বাবধানে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা: সাবেক এমপি মতিন, বিএনপি নেতা আঃ করিম, এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নাম স্থানীয়রা উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ সখীপুরে মুদি ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা
সুশীল সমাজ এবং সাধারণ জনগণ বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো সুশীল চর্চার পরিবর্তে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে লিপ্ত। ফসলি জমি এবং বসতভিটা ধ্বংস করে এরা দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করছে। প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে জমি বিলীন হচ্ছে এবং বাড়িঘর ধ্বংস হচ্ছে। প্রশাসন কোনো একটি বালু মহল বন্ধ করলে, পরের দিন তিনটি নতুন মহল তৈরি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু সদস্য এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এবং নিয়মিত সুবিধা নিচ্ছে।
কুড়িগ্রামে বালু ও মাটি বিক্রির এই অবৈধ কার্যক্রম পরিবেশ, কৃষি এবং জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি। সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষ অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন।