মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বালুমহল ইজারা নিয়ে নদীর তীরবর্তী এলাকার পলি মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এতে পদ্মার পাড়ের গ্রামগুলো ভয়াবহ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। প্রতিবছর বসতভিটা হারিয়ে নতুন জায়গায় বাড়ি তুলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি অবৈধ মাটি উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক বিএনপি নেতা।
গোদাগাড়ীর ফুলতলা, প্রেমতলী ও শেখেরপাড়া বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন রাজশাহী নগরের কাশিয়াডাঙ্গার বাসিন্দা মোখলেসুর রহমান মুকুল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সরকারি অনুমোদিত বালুমহালের পাশাপাশি বিদিরপুর এলাকায় স্বপন ঘাটিয়ালের বাড়ির পাশে আরেকটি অবৈধ ঘাট খুলে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটছেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মোখলেসুর রহমান মুকুল হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রচারণার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আসাদকে তিনি একটি বিলাসবহুল গাড়িও উপহার দেন। এরপর নিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে গোদাগাড়ীর দুটি বালুমহালের ইজারা বাগিয়ে নেন।
মোখলেসুর রহমান মুকুল বালুমহল ইজারা নেওয়ার পর থেকেই নদীর তীর থেকে পলি মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। দীর্ঘদিন স্থানীয়রা ভয়ে এ বিষয়ে মুখ খোলার সাহস পাননি। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর স্থানীয়রা প্রতিবাদ শুরু করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বালুমহাল বন্ধের দাবিতে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয় এবং মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়।
মাটিকাটা ইউনিয়নের তিনটি বালুমহালে মাটি কাটার প্রতিবাদ করায় গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির ছাত্র সংগঠনের নেতা সাইফুদ্দিন টমাস মারধরের শিকার হন। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। স্থানীয়দের দাবি, মোখলেসুর রহমান মুকুল আত্মগোপনে থাকলেও তার ভাই মো. বাবু ও ভাতিজা সাজিম মাটিকাটা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাজিম এখন নিজেকে রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ রাবিতে শিমুল হত্যা: সহকারী প্রক্টরসহ ১৫ জনের নামে মামলা
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াতের ছত্রচ্ছায়ায় এই অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুকুর খনন, বালু উত্তোলন ও নদীর মাটি কাটা—সবই ইউএনওকে ম্যানেজ করেই হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও পবা ও বড়কুঠি ভূমি অফিসে থাকার সময় ইউএনও আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ফলে তাকে দ্রুত গোদাগাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, "এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসী দিনের বেলা অভিযোগ করলেও বিকালে নিজেরাই তা তুলে নেয়। তারা আবার আইনবিরোধী কোনো কাজ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"