
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন নিউজ পোর্টাল “উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন” এর বার্তা সম্পাদক রমজান আলীসহ সাতজন সাংবাদিক।
গত ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার দিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা দুই সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেয় এবং তাদের মোবাইল ফোন ও ভিডিও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। আহত সাংবাদিকরা বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের অফিস স্টাফ মিনুর বাম হাত এবং অফিস সহকারী শুভর ডান পা ভেঙে গেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পবা উপজেলার পৌর বিএনপির কথিত নেতা শরীফ, তার সহযোগী আওয়াল ও আজাদ এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুর খননকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পবা থানার কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে ২০ লাখ টাকা দিয়ে বিএনপি নেতা শরীফ পুকুর খনন শুরু করেন। শুধু পুকুর খননই নয়, তারা পবা থানা এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছেন।
এছাড়া, বিএনপির নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের নাম ভাঙিয়ে শরীফ ও তার সহযোগীরা নানা অনিয়ম করে চলেছেন, যা নিয়ে বিব্রত বিএনপির শীর্ষ নেতারাও।
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক রমজান আলী বলেন, “আমরা প্রথমে পুকুর খননের খবর পেয়ে এসিল্যান্ডকে ফোন দিই। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে নিজেরাই ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে পৌঁছে ভিডিও ধারণ শুরু করি এবং মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের চালকের সাক্ষাৎকার নিতে থাকি। ঠিক তখনই শরীফ, আওয়াল ও আজাদের নেতৃত্বে ১০-১২ জন লোক মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা বাঁশ ও রড দিয়ে আমাদের এলোপাতাড়ি মারধর করে।”
আরও পড়ুনঃ রাজশাহীর বালুমহলে মাটি কেটে বিক্রি, হুমকির মুখে নদী তীরবর্তী গ্রাম
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের প্রধান সম্পাদক ও জাতীয় দৈনিক “মাতৃভূমির খবর”-এর ব্যুরো প্রধান এম.এ.হাবীব জুয়েল বলেন,
“বিএনপি একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দল। এ দলের প্রকৃত নেতারা চাঁদাবাজি বা সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে কিছু স্বঘোষিত ব্যক্তি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে।”
তিনি আরও জানান, “সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জেলা, বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ দাখিল করা হবে। পাশাপাশি, তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।”
হামলার ঘটনার পরেও প্রশাসনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন কেন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কি অবৈধ পুকুর খনন এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়, নাকি তাদের নীরব ভূমিকাই বজায় রাখে।