মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ দীর্ঘ ২০ বছর পর রাহুমুক্ত হলো দারুল ইহসান ট্রাস্ট। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বৈধ ট্রাস্টকে পাশ কাটিয়ে ২০০৬ সালে একটি চক্র অবৈধভাবে নতুন ট্রাস্ট গঠন করে কয়েক শ’ কোটি টাকার সম্পদ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সৈয়দ আলী নকি ও তার সহযোগী অ্যাডভোকেট ফয়জুল কবির এবং উসমান গণির নেতৃত্বে গঠিত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আদালতের একাধিক রায়ের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
১৯৮৬ সালে ড. সৈয়দ আলী আশরাফের উদ্যোগে দারুল ইহসান ট্রাস্ট গঠিত হয়। তবে ২০০৬ সালে সৈয়দ আলী নকি কৌশলে আগের ট্রাস্টকে গোপন রেখে নতুন ঠিকানা ব্যবহার করে আরেকটি অবৈধ ট্রাস্ট গঠন করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কিছু মহলের সহযোগিতায় তারা সাভারের গণকবাড়ি ও ধানমন্ডির ৯/এ রোডের ২১ নম্বর বাসাসহ বিপুল সম্পত্তি দখল করে নেয়।
এই দীর্ঘ সময়ে গণকবাড়ির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধানমন্ডির আশরাফ চ্যারিটেবল ও আছিয়া আশরাফ মহিলা মাদরাসা, কাপড়ের মার্কেট ও কাঁচাবাজারের মালিকানা অবৈধভাবে ভোগ করেছে এই সিন্ডিকেট।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ধানমন্ডির ২৯/এ রোডের ২১ নম্বর বাড়ির কিছু অংশ দখল করেছিলেন এবং সেখানে তার মেয়ের জন্য একটি বিলাসবহুল অফিস তৈরি করিয়েছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর নানক পালিয়ে যান।
বিভিন্ন আদালতের রায়ের ভিত্তিতে এখন ১৯৮৬ সালের মূল ট্রাস্টকেই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং দখলদারদের উচ্ছেদ করে ট্রাস্টের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকারের সময় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটি একটি ছিল। রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও অধ্যাপক বি. চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ বরগুনা-২ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেলেন ডা. সুলতান আহমেদ
সাভারের গণকবাড়ির ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে সৌদি পার্লামেন্টের তৎকালীন স্পিকার ড. ওমর আব্দুল্লাহ নাসিফ ও মিসরের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ড. সাফটি পরিদর্শন করেছেন এবং এখানকার শিক্ষা কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ ২০ বছর পর ট্রাস্ট পুনরুদ্ধারের ফলে এখন দারুল ইহসান ট্রাস্ট পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারবে। দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও আইনগত পরিবর্তনের ফলে এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়েছে এবং প্রকৃত মালিকদের কাছে ট্রাস্টের সম্পত্তি ফেরানোর কাজ চলছে।
এই দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে দারুল ইহসান ট্রাস্ট এখন নতুনভাবে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।