মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে ৪৭২টি সড়ক উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রসুলবাগ আবাসিক থেকে বাকলিয়া এক্সেস রোড সংযোগ সড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মেয়র জানান, ২০০০ ফুট মূল সড়ক এবং প্রায় ২০০ ফুট বাই-লেনসহ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। কোভিড-১৯ রিকভারি প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ সড়ক নির্মাণ করছে। মূল প্রকল্পের আওতায় রসুলবাগ থেকে বাকলিয়া এক্সেস রোড এবং সৈয়দ শাহ রোড হেলথ কেয়ার আবাসিক এলাকার সংযোগ সড়কও উন্নয়ন করা হবে।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, চট্টগ্রাম মহানগরের ৪৭২টি সড়কের উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কিছু সড়কের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, কিছু চলমান রয়েছে এবং বাকিগুলোর উন্নয়ন শিগগিরই শুরু হবে। তিনি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, "রাস্তার মানের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নির্মিত রাস্তা টেকসই হতে হবে। নিম্নমানের কাজ হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।"
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারদের কোনো ধরনের ঘুষ বা কমিশন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। জনগণের করের টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করতে হবে এবং রাস্তা নির্মাণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। উন্নয়ন ও স্বচ্ছতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "চট্টগ্রামের উন্নয়ন কাজ চলবে, দুর্নীতির কোনো স্থান নেই।"
চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে চাঁদাবাজদের কোনো জায়গা নেই বলে হুঁশিয়ারি দেন মেয়র। তিনি জনগণকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, "শহরে যারা চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জনগণ যদি অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য জানায়, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বর্ষাকাল আসন্ন হওয়ায় জলাবদ্ধতা সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে মেয়র বলেন, "সিডিএর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে সাময়িক কিছু অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমরা মনিটরিং করছি, যাতে পানি জমে না থাকে এবং দ্রুত নিষ্কাশন হয়।" তিনি নগরবাসীকে রাস্তার ড্রেনের মধ্যে প্লাস্টিক ও বর্জ্য না ফেলতে অনুরোধ করেন এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুনঃ আশুলিয়ায় রাজউকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সোহরাবের বিপুল সম্পদের মালিকানা, তদন্তের দাবি
মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুইবার মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন মেয়র। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, "যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর নজরদারির ঘোষণা দেন মেয়র। তিনি বলেন, "সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোতে রমজানে পণ্যের দাম কমানো হয়, অথচ বাংলাদেশে উল্টো দাম বাড়ানো হয়। ব্যবসায়ীদের উচিত জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা।"
তিনি বাজার মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশ দেন এবং জনগণকে অনুরোধ করেন, "যদি কেউ অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করে, তাহলে আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।"
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম, মাহমুদ শাফকাত আমিন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম আশফাক, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ), জিয়াউল হক জিয়া প্রমুখ।