বাবুল রানা, মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় নির্মমভাবে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মা খুন। শুক্রবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের শালিখা গ্রামে এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাতেই অভিযুক্ত ছেলে মো. রাজিব (৩২) কে গ্রেফতার করেছে মধুপুর থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ঘাতক রাজিবের স্ত্রী শোভা। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাজিব দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন। অতিরিক্ত মাদকের প্রভাবে তিনি এলাকায় বিভিন্ন সময় মানুষকে দা-বটি দিয়ে ধাওয়া করতেন। এমনকি তিনি নিজের অন্ডকোষ কেটে খেয়ে ফেলার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনাও ঘটান। এর আগেও মাদক ও অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়রা তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পাঠান। পরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে তিনি জেলও খেটেছেন।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গত ৭-৮ মাস ধরে তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তার মা রাজিয়া বেগম (৪৫) ছেলের নেশার টাকা জোগাড় করতে মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন।
শুক্রবার দুপুরে রাজিয়া বেগম পাশের বাড়িতে ইফতার তৈরি করতে যান। কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফিরে নিজের ঘরে বসে পান খাচ্ছিলেন। এ সময় রাজিব হঠাৎ এসে আনারস কাটার ধারালো বটি দিয়ে মায়ের পিঠে কোপ দেন। মা চিৎকার দিলে রাজিবের স্ত্রী শোভা তাকে বাঁচাতে ছুটে গেলে তাকেও কোপিয়ে হাতের চারটি আঙুল কেটে দেন রাজিব।
রাজিয়া বেগম প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও রাজিব পেছন থেকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন এবং পা বেঁধে লাশ টেনে-হিঁচড়ে বাড়ির পেছনে পুঁতে ফেলার চেষ্টা করেন।
এ দৃশ্য দেখে রাজিবের স্ত্রী শোভা ও তাদের ৯ বছরের মেয়ে রিয়ামনি চিৎকার করতে থাকেন। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এলে রাজিব তাদেরও ধারালো বটি দিয়ে ধাওয়া করে। পরে এলাকাবাসী একত্রিত হলে রাজিব দৌড়ে পালিয়ে যান।
নিহতের নাতনি ও ঘাতকের মেয়ে রিয়ামনি (৯) বলেন, "আমি বারান্দায় বসে ছিলাম, দাদু ঘরে বসে পান খাচ্ছিলেন। বাবা হঠাৎ এসে দাদুকে কোপায়। আমি চিৎকার দিলে মা দাদুকে বাঁচাতে এলে তাকেও কোপায়। মা আমাকে নিয়ে পালানোর সময় দাদু বলছিল, ‘মনিকে নিয়ে পালাও, ও তোমাদেরও মারবে।’ কিন্তু বাবা দাদুকে আবার কোপায়।"
আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রাম প্রবাসী ক্লাবের উদ্যোগে নগদ অর্থ ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
রাতেই মধুপুর থানা পুলিশ অভিযুক্ত রাজিবকে ধরতে অভিযান শুরু করে। পরে রাত পৌনে ৩টার দিকে মহিষমারা ইউনিয়নের কোনাপাড়া এলাকা থেকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল কবীর।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম, ওসি এমরানুল কবীর, ওসি (তদন্ত) রাসেল, এসআই সেলিম ও আলোকদিয়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আ. রাজ্জাকসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।