spot_img

― Advertisement ―

spot_img

রাজশাহীতে শিল্পে ও সাহিত্যে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে রাজশাহীতে সাহিত্য ও শিল্পের এক প্রাণবন্ত মিলনমেলা বসেছিল বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের চত্বরে। রচনা ও চিত্রাঙ্কন...
প্রচ্ছদসারা বাংলারাজশাহী মাউশিতে দুর্নীতির রাজত্ব, পরিচালকের জড়িত থাকার অভিযোগ

রাজশাহী মাউশিতে দুর্নীতির রাজত্ব, পরিচালকের জড়িত থাকার অভিযোগ

মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী আঞ্চলিক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে দুর্নীতির চক্র গড়ে তুলেছেন সহকারী পরিচালক (এডি) মো. আলমাছ উদ্দিন। নিয়মবহির্ভূতভাবে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে রাজশাহী নগরীতে কয়েক কোটি টাকার দুটি ফ্ল্যাট কেনার তথ্যও মিলেছে। তার রান্নাঘরে ঘুষের চার ব্যাগ টাকা রাখার ঘটনাও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

তবে ৫ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন পরিচালক অধ্যাপক মো. আছাদুজ্জামানও অল্প সময়ের মধ্যেই আলমাছের অপকর্মের সঙ্গী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুজন মিলে যেন দুর্নীতির এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন। পরিচালক বাসা ভাড়া না নিয়ে অফিসের গেস্টরুমকে আবাসস্থল বানিয়ে রাতযাপন করছেন। রাজশাহী অঞ্চলের ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের বিশেষ এমপিওভুক্তিতেও ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ নভেম্বর মাউশি রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর অধ্যাপক আছাদুজ্জামান সপ্তাহের প্রায় চার দিন পাবনায় নিজের এলাকায় থাকেন। ফলে আলাদা বাসা না নিয়ে বাকি তিন দিন তিনি অফিসের গেস্টরুমেই থাকেন। তার গাড়িচালক সাইদুল, পিয়ন জাহাঙ্গীর এবং দৌড়-ঝাঁপের দায়িত্বে থাকা আরও এক কর্মচারীর মাধ্যমে তিনি আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করেন। অভিযোগ রয়েছে, সহকারী পরিচালক আলমাছ উদ্দিনের সঙ্গে আঁতাত করে মাউশির রাজশাহী কার্যালয়কে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন তিনি।

এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “স্যারের স্ত্রী পাবনায় চাকরি করেন, তাই এখানে তিনি অফিসের একটি কক্ষেই থাকেন। তবে হয়তো কিছুদিনের মধ্যে বাসা ভাড়া নেবেন।”

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী ১০৩ জন শিক্ষকের তালিকা পাঠান। পরে অধ্যাপক আছাদুজ্জামান তা সংশোধন করে ২০৭ জনের তালিকা পাঠান, যার মধ্যে ৪২ জন আগে থেকেই এমপিওভুক্ত ছিলেন। ফলে অবৈধভাবে ৭৬ জনের নাম যোগ করা হয়।

এছাড়া নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ এবং কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। বগুড়ার নন্দীগ্রামের মুনসুর আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে নিয়োগ দেন পরিচালক, যদিও তিনি আগের কলেজ থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। নাটোরের গুরুদাসপুরের রোজী মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজেও অনিয়মের মাধ্যমে এমপিওভুক্তি হয়েছে।

বিভিন্ন কলেজে ভুয়া সনদধারী এবং এনটিআরসিএ সুপারিশ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। যেমন— বগুড়ার মহাস্থান মহিসওয়ার ডিগ্রি কলেজে এনটিআরসিএ সুপারিশ ছাড়া বাংলা বিভাগের শিক্ষক এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। রাজশাহীর মহব্বতপুর খানপুর ডিগ্রি কলেজে জনবল কাঠামোর বাইরে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাধানগর বরেন্দ্র কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আশরাফুল হককে ব্যানবেইসে তথ্য আপডেট ছাড়াই এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। নওগাঁর রাণীনগর আবাদপুকুর কলেজে ভূগোল বিভাগের শিক্ষক নাজমুল হক, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ড. মোজাহারুল ইসলাম মডেল কলেজে কৃষি বিভাগের শিক্ষক আব্দুল লতিব, নাটোরের লালপুর উপজেলার কলশনগর কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্বপ্না খাতুন, সাচিবিক বিদ্যার রাশেদুল ইসলাম—এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন করে তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক যহুর আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি, কলেজে শিক্ষক নিয়োগ থেকে এমপিও পর্যন্ত বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়। শিক্ষাখাতের এই অবক্ষয় পুরো জাতির জন্য ভয়ংকর।”

এদিকে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আলমাছের অপসারণ দাবিতে শিক্ষকরা একাধিকবার মানববন্ধন ও দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো তিনি বহাল তবিয়তে আছেন এবং নানা কৌশলে বর্তমান পরিচালককেও নিজের নিয়ন্ত্রণে এনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাটোরের মহারাজা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম জানান, তার কলেজের এক শিক্ষকের এমপিও করে দেওয়ার জন্য আলমাছ ৪ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। পরে রেস্টুরেন্টে ডেকে ৪০ হাজার টাকা বাড়তি নেন, কিন্তু এমপিও হয়নি, টাকাও ফেরত পাননি।

নাটোরের রহমত ইকবাল কলেজের অধ্যক্ষ মনসুর রহমান বলেন, “১৩ জানুয়ারি আমি আমার কলেজের দুই শিক্ষকের এমপিওর ব্যাপারে মাউশিতে যাই। এডি আলমাছ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং অফিস থেকে বের করে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন।”

আরও পড়ুনঃ থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশিপে দেবহাটার রোকনুজ্জামান

সহকারী পরিচালক আলমাছ উদ্দিনের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি ‘এখনই আসছি’ বলে অফিস থেকে পালিয়ে যান। পরের দিনও অফিসে এসে দেখা মেলেনি।

পরিচালক অধ্যাপক আছাদুজ্জামান বলেন, “আমি আসার পর কোনো অনিয়ম হয়নি। আগের লেনদেনের বিষয় তদন্তাধীন।”

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক ফোরামের রাজশাহী বিভাগীয় আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মাউশির রাজশাহী অফিসে দু-একজন ছাড়া কেউ সৎ নন। আলমাছ একসঙ্গে সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন, যা নজিরবিহীন।”

তবে, নানা অভিযোগের পরও আলমাছ ও পরিচালকের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়েও। এমপিওভুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে শিক্ষাখাতের অব্যবস্থাপনা আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।