মোঃ মাসুদ রানা মনি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এক গৃহবধূ জরায়ু অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ভুল চিকিৎসার কারণে কিডনী হারিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ তাহমিনা বেগম (৩৮) বর্তমানে শয্যাশায়ী অবস্থায় নিজ পিত্রালয়ে জীবনযুদ্ধে লড়ছেন। এ ঘটনায় তার পরিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, রামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব দেহলা গ্রামের হায়দার আলী মুন্সী বাড়ির মো. কামরুল আলমের মেয়ে তাহমিনা বেগম গত ৩ জানুয়ারি জরায়ু অপারেশনের জন্য রামগঞ্জের কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ২৫ হাজার টাকার চুক্তিতে তাহমিনার অপারেশন সম্পন্ন করেন। কিন্তু অপারেশনের তিনদিন পর তাহমিনা বাড়ি ফিরলে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন।
পরে ডা. মোস্তাকের পরামর্শে তাহমিনাকে রামগঞ্জ শহরের ফেমাস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার কর্তৃপক্ষ জানান, জরায়ু অপারেশনের কারণে তাহমিনার কিডনি ব্লক হয়ে গেছে। এরপর প্রথমে ১৫ হাজার এবং পরে আরও ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। ফেমাস হাসপাতালের এমডি ডা. সফিকুর রহমান পূর্বের অপারেশনের স্থলে দুইবার এবং অন্য স্থানে আরও দুইবারসহ মোট চারবার অপারেশন করেন।
তাহমিনার মা কহিনুর বেগম জানান, চিকিৎসা ব্যয়ের ভার বহন করতে না পেরে একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঈদের পূর্বের দিন মোট এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা বিল মওকুফ করে তাহমিনাকে ছাড়পত্র দেন। বর্তমানে তিনি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় পিত্রালয়ে শুয়ে আছেন।
এ ঘটনায় রামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের গাইনী সার্জন ডা. নাজমুল হকসহ একাধিক অভিজ্ঞ চিকিৎসক জানান, ডা. মোস্তাক আহম্মেদ মূলত একজন এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ। গাইনী বা সিজার অপারেশন করার জন্য তার কোনো অনুমোদন থাকার কথা নয়।
অভিযুক্ত ডা. মোস্তাক আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি অপারেশনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলে দাবি করেন। পাশাপাশি স্বীকার করেন, কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে ভুল হতে পারে।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হাসান শাহীন বলেন, “জরায়ু বা সিজার অপারেশন করার জন্য অবশ্যই গাইনী সার্জন হতে হবে। ডা. মোস্তাক কিভাবে অপারেশন করেছেন, সে বিষয়ে আমি অবগত নই।”
আরও পড়ুনঃ লক্ষ্মীপুরে বিএনপির দু-পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১৫; বাড়িঘর ভাংচুর
তাহমিনার বাবা মো. কামরুল আলম বলেন, “আমার মেয়ে এখন কিডনি হারিয়ে বিছানায় পড়ে আছে। গরিব মানুষ হিসেবে এত টাকা খরচের পরও এভাবে বিপর্যস্ত হতে হবে, ভাবিনি। আমি সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
স্থানীয়দের মধ্যে এ ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনিয়ম ও অবহেলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।