মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম মহানগরীর জামালখান এলাকায় পাহাড় কেটে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন চউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ নুরুল করিম।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন চউকের আইন উপদেষ্টা এডভোকেট জিয়া হাবীব আহ্সান, বোর্ড মেম্বার ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, চউকের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম, সচিব, প্রকৌশলীবৃন্দ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
চউকের চেয়ারম্যান বলেন, “নগর পরিকল্পনার বাইরে গড়ে ওঠা যেকোনো অবৈধ স্থাপনা—বিশেষ করে পাহাড় কেটে নির্মিত ভবন—শহরের পরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর হুমকি। বর্ষায় এসব এলাকায় ভূমিধ্বস ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। তাই আমরা এসব স্থাপনার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি।”
এই অভিযানে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)-এর মহানগর সেক্রেটারি এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট কে এম শান্তনু চৌধুরী, হৃদয় বড়ুয়া, মোঃ আবদুল আলী, নজরুল হোসেন প্রমুখ।
বিএইচআরএফ মহাসচিব এডভোকেট জিয়া হাবীব আহ্সান বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। মিডিয়া ও নাগরিকদের সি আর বি আন্দোলনের মতো একযোগে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করছি—দৃশ্যমান পাহাড় কেটে গড়ে ওঠা কোনো স্থাপনায় যেন ফ্ল্যাট বা জমি ক্রয় না করেন। এতে তারা শুধু নিজেরাই ক্ষতির মুখে পড়বেন না, বরং আইনগত জটিলতায়ও জড়াতে পারেন।”
তিনি আরও জানান, “পাহাড় কাটা একটি ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ধারা ৬(খ)-এ পাহাড় কাটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর জন্য কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ধারা ২৬৮ অনুসারে, জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর পরিবেশ সৃষ্টিও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।”
চউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ নুরুল করিম বলেন, “উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়া নির্মাণ কাজ পরিচালনা করলে কিংবা পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা গড়লে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে এসব এলাকায় ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হবে যাতে করে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধ করা যায়।”
আরও পড়ুনঃ পারভেজ হত্যার বিচারের দাবিতে ইবি ছাত্রদলের মানববন্ধন, কালো ব্যাচ ধারণ করে প্রতিবাদ
তিনি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, “পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
প্রসঙ্গত, জামালখান এলাকায় 'স্বপ্নীল ফ্যামিলি' নামের একটি নির্মাণ প্রকল্পে পাহাড় কাটায় চউক তা বন্ধ করে দেয়। এরপর প্রকল্প কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নং- ৪৬৫২/২০২৪) দায়ের করে এবং চউকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদেশ লাভ করে। তবে ২০ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এই আদেশের বিরুদ্ধে শুনানি শেষে মাননীয় বিচারপতি মোঃ রেজাউল হক ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ওই নিষেধাজ্ঞা ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। চউকের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মুরাদ সরোয়ার ভূইয়া এবং তাকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট মুহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান।