
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে তাঁরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসনকে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন মুক্তমঞ্চ পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়ে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গান, কবিতা ও কথামালার মাধ্যমে শিল্পী-সাহিত্যিকরা মুক্তমঞ্চ ভাঙার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন কবি শামসুল ফয়েজ, নাফিসা মাহজাবিন, কামরুল হাসান, শরৎ সেলিম, সংগীতশিল্পী অঞ্জনা সরকার, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, নাগরিক নেতা তৌহিদুজ্জামান ছোটন, সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদুল হাসান ও অনেকেই।
প্রসঙ্গত, বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অবস্থিত সাহিত্য সংসদের স্থাপনা “মুক্তমঞ্চ” জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের যৌথ অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে কোনো পূর্ব নোটিশ ছিল না বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
কবি শামীম আশরাফ বলেন, “প্রায় চার দশক ধরে আমরা এই মঞ্চে সাহিত্য চর্চা করছি। এখানে কবি নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, শামসুল ফয়েজের মতো গুণীজনের পদচারণা রয়েছে। এই জায়গাটি ভেঙে দিয়ে শুধু কাঠামো নয়, হৃদয়ের ওপর আঘাত করা হয়েছে।”
সাহিত্যিক সালিম হাসান বলেন, “এই মঞ্চ আমাদের সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র। অবিলম্বে মঞ্চ পুনঃনির্মাণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।”
আরও পড়ুনঃ “জনগণ নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে ক্ষমা করবে না”— আমির খসরু
কবি আশরাফ মীর বলেন, “কোনো নোটিশ ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো, তা জানা দরকার। মুক্তমঞ্চ কোনো রাজনীতির জায়গা নয়, এটা আমাদের মননের জায়গা।”
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। নেটিজেনরা মঞ্চ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, এটি ময়মনসিংহের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপর সরাসরি আঘাত।
প্রতিবাদীরা জানান, আগামী দুই দিনের মধ্যে যদি মুক্তমঞ্চ পুনঃনির্মাণের কোনো উদ্যোগ দেখা না যায়, তাহলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বড় পরিসরে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তাঁদের দাবি, “সাহিত্যচর্চার এই অনন্য স্থাপনা অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে।”