spot_img

― Advertisement ―

spot_img

রামগঞ্জবাসীর জীবনে মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে বীরেন্দ্র খাল — সময়মতো খনন না হলে এবারও ডুববে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

মোঃ মাসুদ রানা মনি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ বীরেন্দ্র খাল এখন রীতিমতো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই...
প্রচ্ছদসারা বাংলারামগঞ্জবাসীর জীবনে মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে বীরেন্দ্র খাল — সময়মতো খনন না হলে...

রামগঞ্জবাসীর জীবনে মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে বীরেন্দ্র খাল — সময়মতো খনন না হলে এবারও ডুববে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

মোঃ মাসুদ রানা মনি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ বীরেন্দ্র খাল এখন রীতিমতো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই খালটির খনন না হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, যার শিকার হয় উপজেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষ। খালের দুই পাড়ে অবৈধ দখল, বাঁধ, ও ময়লা-আবর্জনায় বাধাগ্রস্ত পানি প্রবাহের কারণে এ দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

২০২৪ সালের বন্যার সময় এই খালের পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণভাবে থেমে গিয়ে রামগঞ্জে সৃষ্টি করেছিল দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা। ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে, বহু পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হয়। কৃষিকাজ, শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হয়। খালের অবস্থা এতটাই নাজুক যে, বর্ষা এলেই পুরো উপজেলা জুড়ে যেন দুর্যোগ নেমে আসে। নোয়াগাঁও, ভাদুর, ভাটরা, দল্টা, করপাড়া, গাজীপুর, চন্ডিপুর, ইছাপুর, লামচর, আথাকরা, হাফানিয়া সহ প্রায় ১৫টিরও বেশি গ্রামে দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রামগঞ্জের অধিকাংশ খালের দিকে কোনো নজর দেওয়া হয়নি। বরং বিভিন্ন স্থানে খালের উপর গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট, বসতবাড়ি ও বাঁধ। অনেক সংযোগ খালে ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা, যা পানি চলাচলের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে, আবার কোথাও কোথাও খালটি একেবারে শুকিয়ে যায়।

২০২৪ সালের বন্যায় যখন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তখন রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে রামগঞ্জ-সোনাপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করা হয়, যার ফলে পানি নামতে শুরু করে। এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা ফারুক হোসেন বলেন, “চার দশকের ময়লার স্তূপ আমরা পরিষ্কার করেছি। কিন্তু যদি নিয়মিত খনন ও সংস্কার না হয়, তাহলে খাল আবারও আবর্জনায় ভরে যাবে এবং বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।”

স্থানীয়দের মতামতে উঠে এসেছে, খালে মাছ চাষ ও বেড়া দেওয়ার ফলে পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষার পানি জমে গ্রাম ডুবে যাচ্ছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে, ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে। শিক্ষক মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, “বীরেন্দ্র খাল পুনর্খনন ছাড়া রামগঞ্জের কৃষি, শিক্ষা ও জনজীবনের স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে না। এই জলাবদ্ধতার পেছনে উজান থেকে আসা পানি নয়, খালগুলোর অদক্ষ ব্যবস্থাপনাই মূল কারণ।”

আরও পড়ুনঃ Bozena-5: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক রিমোট কন্ট্রোলড মাইন ক্লিয়ারিং সিস্টেম

এই বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ মোহাম্মদ রবিন শীষ বলেন, “বীরেন্দ্র খাল খনন এখন সময়ের দাবি। ২০২৪ সালের বন্যায় শতাধিক বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে দুই কিলোমিটার খাল ইতোমধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চাটখিল-রামগঞ্জ ও কাটাখালি অংশে প্রায় ১৩ কিলোমিটার খাল খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

সচেতন মহল মনে করছেন, এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ২০২৫ সালের বর্ষাতেও রামগঞ্জবাসীকে জলাবদ্ধতায় ভুগতে হবে। তাই সময়মতো খাল খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রামগঞ্জবাসীকে এই দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করার জোর দাবি উঠেছে।