spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদসারা বাংলামেহেরপুরে বাণিজ্য মেলায় র‍্যাফল ড্রর নামে জুয়ার উৎসব, বন্ধের দাবি এলাকাবাসীর

মেহেরপুরে বাণিজ্য মেলায় র‍্যাফল ড্রর নামে জুয়ার উৎসব, বন্ধের দাবি এলাকাবাসীর

মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি: মেহেরপুর পৌর শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় মাসব্যাপী ‘দেশীয় শিল্প বাণিজ্য মেলায়’ প্রবেশ টিকিটের ওপর র‍্যাফল ড্রর নামে প্রতিদিনই চলছে এক ধরনের প্রকাশ্য জুয়া—এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

গতকাল সোমবার রাতে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ টিকিটের নামে বিক্রি হচ্ছে ‘লাকি কুপন’, যা দিয়ে প্রতিদিন একটি করে মোটরসাইকেলসহ নানা পুরস্কারের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। এতে স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের মধ্যে যেমন প্রবল আগ্রহ, তেমনি বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা।

ভ্যানচালক সজীব মিয়া জানান, তিনি ৮০ টাকা দিয়ে চারটি টিকিট কিনেছেন। তার আগেও পাঁচ হাজার টাকার টিকিট কিনেও কিছু পাননি। তবুও আশা ছাড়েননি। এরকম অসংখ্য সাধারণ মানুষ প্রতিদিন টিকিট কিনে ভাগ্য পরীক্ষা করছেন।

জানা গেছে, ‘স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবীব, এনসিপি নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ ও কিছু ছাত্রনেতার প্রত্যক্ষ মদদে চলছে র‍্যাফল ড্র কার্যক্রম। প্রতিটি ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে টিকিট বিক্রির বার্তা। প্রতিটি ইজিবাইক চালককে প্রতিদিন এক হাজার টিকিট বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মিনারুল ইসলাম জানান, মেলায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, ছিনতাই, চুরি, ইভটিজিং বেড়েছে। টিকিটের নেশায় অনেক স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীও জড়িয়ে পড়ছে এই জুয়ায়।

মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “জুয়া মানেই অবৈধ—সে যেভাবেই পরিচালিত হোক না কেন। জেলা প্রশাসন কোনোভাবেই এটি অনুমোদন দিতে পারে না। বাণিজ্য মেলার আড়ালে লটারির নামে জুয়া চালানো প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা।”

স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি আশিকুর রহমান অবশ্য বলেন, “জেলা প্রশাসক আমাদের শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছেন। আমরা শর্ত মেনেই র‍্যাফল ড্র পরিচালনা করছি। এটি জুয়ার আওতায় পড়ে না।”

আরও পড়ুনঃ কোভিড প্রতিরোধে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চলছে জোর প্রস্তুতি

তবে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়ক শাকিল আহমেদ বলেন, “এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলের কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, “শর্ত ভঙ্গ করে লটারির নামে কোনো অনৈতিক বা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হলে মেলার অনুমতি বাতিল করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অবিলম্বে এই র‍্যাফল ড্রর নামে জুয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, “একটি বাণিজ্য মেলা আনন্দের, কিন্তু এই মেলা এখন পরিণত হয়েছে জুয়ার আসরে—যা পরিবার ও সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে।”