
মোঃ মাসুদ রানা মনি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে চাঁদার দাবিতে এক মিলকর্মীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারী একটি সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রামগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৩ জুন, উপজেলার ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের লক্ষ্মীধর পাড়া গ্রামের নোয়াবাড়ি এলাকায়। হামলার শিকার আমির হোসেন (৫২) দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কামাল মেম্বারের ‘স’ মিলে কর্মরত ছিলেন। তিনি মূলত মুক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্মীধর পাড়ায় অবস্থান করছিলেন।
এলাকাবাসী ও মামলার সূত্রে জানা যায়, আমির হোসেনকে চাঁদার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন মো. হোসেন, তার ছেলে রাসেল, এবং আলতাফ আলীর ছেলে নাছির ও শামীম। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
১৩ জুন রাত ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে গাছ সংক্রান্ত এক আলোচনার সময় আমির হোসেনের মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতে ঘর থেকে বের হতেই অভিযুক্তরা তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। হামলার সময় রাসেল তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোরপূর্বক তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সম্পর্কের অভিযোগ তোলে। এরপর সাবেক মেম্বার কামাল হোসেন ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে স্ট্যাম্প উদ্ধার করেন।
তবে ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ঘটনার পাঁচ দিন পরও হামলাকারীরা ক্ষান্ত হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমির হোসেনের ছেলের কাছেও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে আব্দুল মন্নান জানান, হামলার সময় তিনি ও তার স্ত্রী এবং বোন ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার ভাই হোসেন ও তার বাহিনী সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে এবং মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে।”
রামগঞ্জ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. স্বপন মিয়া বলেন, “আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। হামলাটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে এবং স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
আরও পড়ুনঃ ‘সহানুভূতির নম্বর’ থাকছে না এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত চারজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। মো. হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক এলাকায় হাওলাতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। কেউ পাওনা চাইলে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করা হয়। রাসেলের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে অস্ত্র ও চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, অন্যদিকে শামীম ঢাকায় প্রভাবশালী পরিচয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে এসব দুর্বৃত্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। থানায় মামলা দায়েরের পর পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে জনমনে ক্ষোভ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।