
শেখ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সাভার প্রতিনিধিঃ আশুলিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার খাইরুল বাশার ভূঁইয়া পাভেলের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, অতিরিক্ত টাকা দাবির অভিযোগে অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন দলিল লেখকরা।
আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির ডাকে ১৭ জুন ২০২৫ থেকে টানা ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন সমিতিভুক্ত প্রায় ২০০ জন সদস্য। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব, আর দলিল সম্পাদনে আসা সাধারণ মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে।
সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, “সরকারি নির্ধারিত ফি’র বাইরে পাভেল অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। দলিল লেখকদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন অনৈতিক অর্থ দাবির প্রতীক। অতিষ্ঠ হয়ে আমরা কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেই এবং আন্দোলনের সব ধাপ সম্পন্ন করেছি।”
তিনি অভিযোগ করেন, সাব-রেজিস্ট্রার পাভেল নিজের স্বার্থকে সরকারের স্বার্থের ওপরে স্থান দিচ্ছেন। যার কারণে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
দীর্ঘ কর্মবিরতির ফলে অফিস কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলিল লেখক, জমির ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলে জমি কেনাবেচা প্রায় বন্ধের পথে। একইসঙ্গে সমিতির সদস্যরা আর্থিক সংকটে ভুগছেন, পরিবার চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে অনেকের জন্য।
সমিতি সূত্রে জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার পাভেল সাভারে যোগদানের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কাছে ঘুষ দাবি করেন। এতে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা তাকে অফিস থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে তিনি ‘ম্যানেজমেন্টের কৌশলে’ আবার অফিসে ফিরলেও স্বভাব বদলায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাব-রেজিস্ট্রার পাভেলের অতীত ইতিহাসও সুখকর নয়। টাঙ্গাইলে কর্মরত থাকা অবস্থায় অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় সেখান থেকেও তাকে সরিয়ে সাভারে বদলি করা হয়েছিল। দলিল লেখক সমিতির নেতারা বলছেন, কেবল বদলি নয়, তার স্থায়ী অপসারণ না হলে তিনি যেখানেই যাবেন সেখানেই ‘ঘুষ বাণিজ্য’ চালিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুনঃ ইবিতে ফের নেকাব নিয়ে কটাক্ষের অভিযোগ ইবি শিক্ষকের বিরূদ্ধে
সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাব-রেজিস্টার পাভেলের বিরুদ্ধে সব অভিযোগের প্রমাণসহ একাধিকবার আলোচনা করা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। তারা দাবি করছেন, এ ধরনের ঘুষখোর কর্মকর্তা সরকারি দপ্তরে টিকে থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতির কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
আন্দোলনরতরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে এবং প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় পর্যায়েও কর্মসূচি দেওয়া হবে। একইসঙ্গে তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যেন দেশের রাজস্ব ও সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষা পায়।
দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, সাব রেজিস্ট্রারের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ট হয়ে সমিতির কোন সদস্য কোন কাজ দিচ্ছে না। এতে কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। অপরদিকে কাজ বা দলিল রেজিস্ট্র সম্পন্য না হওয়ায় সমিতির সদস্যগণও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার পাভেলের সাথে মোঠোফোনে যোগাযোগ করলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, অফিসে কাজ হচ্ছে, আর অতিরিক্ত টাকা নেয়ার তার কোন সুযোগ নাই। সরকারী ফি প্রদান করা হয় ব্যাংকে আর তার অফিস থেকে যে টাকা নেয়া হয় তার রশিদ প্রদান করা হয়।
দলিল লেখক কল্যান সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, সাব রেজিস্ট্রার পাভেলের অনিয়মের অনেক প্রমান তাদের হাতে আছে। সুতরাং এই দূর্নীতিবাজ সাব রেজিস্ট্রারের দ্রুত অপসারণ দাবী করেন তিনি।
সাভার-আশুলিয়ার সচেতন নাগরিকরা প্রশ্ন তুলছেন—এতো অভিযোগ, তদন্ত ও অনিয়মের প্রমাণ সত্ত্বেও কীভাবে পাভেল এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন?