
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের সড়ক ও মহাসড়কজুড়ে বেপরোয়া গতির থ্রি-হুইলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রর মতো অবৈধ যানবাহন যেন প্রতিনিয়তই মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন—মাত্র ছয় মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ১৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২২২ জন, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪২ জন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ জেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যান চলাচলে কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকেরা পাল্লা দিয়ে চলে ভারী যানবাহনের সঙ্গে। সংঘর্ষে ঘটছে একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
ময়মনসিংহ বিআরটিএ কার্যালয়ের তথ্যানুসারে: জানুয়ারি: ১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত, ফেব্রুয়ারি: ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত, মার্চ: ১৫টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, এপ্রিল: ২৮টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত, মে: ১৯টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত, জুন: ৩০টি দুর্ঘটনায় ৬৬ জন নিহত। এই ভয়াবহ পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে—প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে প্রাণ, আর তা ঠেকাতে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের অভিযোগ, এসব অবৈধ যানবাহনের চালকদের বেশিরভাগেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স, নেই যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র। তারা নিজেরাই স্বীকার করছেন, ট্রাফিক আইন তাদের কাছে যেন কাগুজে নিয়মমাত্র।
একজন সিএনজি চালক মো. ইসমাইল বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্টের পর কেউ আর আইন মানে না। নিজেরাও মানি না, কাগজপত্র নেই—তবুও রাস্তায় চলছি।”
মাহেন্দ্র চালক শরিফুল বলেন, “বাচ্চা ছেলেরা এখন গাড়ি চালায়, প্রতিযোগিতা করে, দুর্ঘটনায় পড়ে। আগে রাস্তায় পুলিশ থাকত, এখন দেখা যায় না।”
জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের চেষ্টা চলছে। তবে শুধু পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
আরও পড়ুনঃ নকল করলে চার বছর পরীক্ষায় বসতে পারবে না শিক্ষার্থীরা
জেলা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. আবু নাঈম জানান, “অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে এবং এ অভিযান আরও জোরদার করা হবে।”
সাধারণ মানুষ বলছেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার খবর, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু কার্যকর কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। জনমনে প্রশ্ন—কথার বৃত্তে ঘুরে প্রশাসন আর কতদিন সময় নষ্ট করবে?
ময়মনসিংহবাসীর জোর দাবি, এখনই শক্ত হাতে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, অদক্ষ চালকদের চিহ্নিত করে লাইসেন্সহীন চালনায় নিষেধাজ্ঞা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন এবং সড়কে আইন প্রয়োগে কঠোরতা আনতে হবে। অন্যথায় ‘মৃত্যুর মিছিল’ আরও দীর্ঘ হবে, নিভে যাবে আরও অজস্র সম্ভাবনাময় জীবন।