
রুবেল গাজী, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয়েছেন এক নারী ও তাঁর তিন বছর বয়সী শিশু কন্যা। পারিবারিক কলহের জেরে মা নিজে বিষপান করে আত্মহত্যার আগে শিশুকন্যাকেও বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—চরলক্ষ্মী গ্রামের কৃষক সাহাবুদ্দিন মাঝির স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৪০) ও তাঁর মেয়ে মিতু আক্তার (৩)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে তাসলিমার বড় মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিয়ে হয় একই গ্রামের মাহফুজ আলমের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। বিষয়টি নিয়ে এক মাস ধরে মা তাসলিমা ও মেয়ে সাবিনার মধ্যে দফায় দফায় বাকবিতণ্ডা ও রাগারাগি চলছিল।
আজ সকালে এ নিয়ে আবারও তুমুল ঝগড়া হয় মা-মেয়ের মধ্যে। এক পর্যায়ে ক্ষোভে-দুঃখে তাসলিমা তাঁর ছোট মেয়ে মিতুকে সঙ্গে নিয়ে পাশের ধানখেতে চলে যান। পরে সেখানেই তাসলিমা প্রথমে মিতুর মুখে বিষ ঢেলে দেন এবং তারপর নিজেও বিষপান করেন।
স্থানীয়রা টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে তাঁদের উদ্ধার করে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে শেষ পর্যন্ত দুজনকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবিরের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা
নিহতদের স্বজনরা জানান, তাসলিমা ছিলেন সংসারজীবনে ক্লান্ত ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া একজন নারী। বারবার মেয়ের দাম্পত্য কলহে জড়িয়ে পড়ে মানসিক চাপ ও হতাশায় তিনি এমন চরম সিদ্ধান্ত নেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাসলিমার স্বামী সাহাবুদ্দিন মাঝি এই ঘটনার জন্য তাঁর বড় মেয়ে সাবিনা আক্তারকে দায়ী করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। তবে সাবিনা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রায়পুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মান্নান বলেন, “নিহত মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, একটি পরিবারে দীর্ঘদিনের টানাপড়েন কীভাবে প্রাণহানির ট্র্যাজেডিতে পরিণত হতে পারে, এই ঘটনা তার নির্মম উদাহরণ। তারা এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পারিবারিক সচেতনতা ও মানসিক সহায়তার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।



