

মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানাধীন লক্ষীপুর ভাটাপাড়া (ফাটা স্কুল সংলগ্ন এলাকায়) এলাকায় অনুমোদন ও প্ল্যান ছাড়াই একাধিকতলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে মেসবাউল হক মেসবা ও তার বোনজামাই মিরাজ খানের বিরুদ্ধে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এবং স্থানীয়দের আপত্তি উপেক্ষা করে বহুতল ভবন নির্মাণ চলতে থাকায় এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। এরই মধ্যে, এই নির্মাণের প্রতিবাদকারীদের ঘরে রাতের আঁধারে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী ইমাম হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম, সারমাদ হোসেন এবং আজিজুল ইসলাম জানান, মেসবাউল হক মেসবা ভবন নির্মাণকালে রাস্তা ও পাশের বাসিন্দাদের জন্য নির্ধারিত খালি জায়গা না রেখেই নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রতিবাদ করলে প্রথমে বিরোধ দেখা দেয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের মধ্যস্থতায় এক শালিসি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভবন নির্মাণ শেষে সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হবে। তবে পরে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে আরও সম্প্রসারণ করেন।
২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট তিনটি পরিবার একত্রে আরডিএতে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আরডিএ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর মেসবাউল হক মেসবা আবারো কাজ শুরু করেন এবং দাবি ওঠে, তিনি আরডিএকে ম্যানেজ করে জোরপূর্বক নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
২০২৫ সালের ৬ জুলাই তিনি প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা করেন। তারপরে, ২৯ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেসবাউল হকের নির্দেশে বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। হামলার আগে তারা রাস্তার লাইট ভেঙে ফেলে যাতে কেউ ভিডিও ধারণ করতে না পারে। পরে তারা বাসার গেট, জানালা, বৈদ্যুতিক মিটার ও সুইচবোর্ড ভাঙচুর করে।
বাসার ভেতরে থাকা নারী-শিশুদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও আগে করা অভিযোগগুলোর কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নিরব ভূমিকা এবং একতরফা মামলা গ্রহণের কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
স্থানীয়রা জানান, মেসবাউল হক মেসবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। চাকরিকালে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হন এবং সেই অর্থ ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে প্রশাসন ও আরডিএকে অগ্রাহ্য করে ভবন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
আরও পড়ুনঃ সাজিদ ছাড়া একা ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতে কষ্ট হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ
এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমরা যত অভিযোগ দেই সবই থানায় পড়ে থাকে, কোনো পদক্ষেপ হয় না। কিন্তু তিনি একবার অভিযোগ করলেই সঙ্গে সঙ্গে মামলা হয়ে যায় তার পক্ষেই।”
বিএমডিএ সূত্র জানায়, মেসবাউল হক মেসবা শ্রমিক লীগের সভাপতি থাকাকালে প্রকল্পে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে ১৫ শতাংশ কমিশন দাবি করতেন এবং অন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। গত ৫ আগস্টের পর মামলা ও হামলার ঘটনায় তিনি বদলি হয়ে পঞ্চগড়ে যোগদান করেছেন।
এ বিষয়ে মেসবাউল হক মেসবা বলেন, “আমি তো পঞ্চগড়ে আছি, এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। বরং ৬ তারিখে আমার বাড়ির ওপর হামলা হয়েছিল, সেই বিষয়ে থানায় মামলা আছে।” তার ভবনের অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনুমোদন আছে” তবে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে “আমি মিটিংয়ে আছি” বলে ফোন কেটে দেন।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মেসবাউল হক মেসবার ভবনের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই। অনুমোদন ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণ পুরোপুরি অবৈধ।
রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”