
মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিতে চট্টগ্রামে রাজনৈতিকভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের একাংশ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ চলাকালে ছাত্র জনতার ওপর হামলা, উস্কানি, তথ্য সরবরাহ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকসহ ৪০ জন সদস্যকে বহিষ্কার এবং আরও ৫৬ জনের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে বলে ক্লাবের অস্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নোটিশ বোর্ডে আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচি ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়, যেখানে বহিষ্কৃত ও স্থগিত সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক অস্থিরতা চলাকালে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের কেউ কেউ রাজনৈতিক পক্ষপাত নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, তথ্য ও ভিডিও সরবরাহের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রেখেছেন এবং রাজনৈতিক মঞ্চে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন।
তাদের দাবি, এইসব কর্মকাণ্ড পেশাদার সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থী এবং প্রেস ক্লাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অপপ্রয়াস।
বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে: ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ করা, কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, প্লট বরাদ্দে অনিয়ম এবং সরকারি দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে নিরপেক্ষতা হারানো।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এসব কর্মকাণ্ড প্রেস ক্লাবের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে। তারা বলেন, “সাংবাদিক নামধারী কিছু ব্যক্তি সাংবাদিকতার আদর্শ ভুলে গিয়েছেন এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের অংশ হয়ে উঠেছেন।”
আরও পড়ুনঃ ফুলবাড়ীতে বৈদ্যুতিক আগুনে দুই পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই, ক্ষতি ১৫ লাখ টাকা
চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে একটি অস্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বিতর্কিত সদস্যদের সদস্যপদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা গেছে, এই কমিটির অধীনেই বহিষ্কার ও স্থগিতাদেশ কার্যকর করা হয়। ক্লাবের একাংশ সদস্যদের দাবি, এটি প্রেস ক্লাবকে সকল মতাদর্শের সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ রাখার প্রয়াস।

চট্টগ্রাম জজ কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, “দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে একটি নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত অবশ্যই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।”
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত বহিষ্কৃত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা করছেন। তাদের কেউ কেউ চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের বর্তমান বা সাবেক দায়িত্বেও ছিলেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রেস ক্লাব সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্তে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।