
মোঃ লাতিফুর রহমান, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালানো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। ওষুধ সরবরাহে অস্বচ্ছতা, নিম্নমানের খাবার, চিকিৎসক-নার্সদের দায়িত্বে গাফিলতিসহ নানা অসংগতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম হাসপাতালটিতে অভিযান চালায়। অভিযানকালে তারা বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড, গুদামঘর ও রান্নাঘর ঘুরে দেখেন এবং রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলেন।
দুদক কর্মকর্তা মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, হাসপাতালের রান্নাঘরে দেওয়া খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের এবং তা ডায়েট চার্ট অনুযায়ী প্রস্তুত করা হচ্ছে না। গুদামে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ থাকলেও ডাক্তার ও নার্সদের নির্দেশে রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। বহির্বিভাগের ওষুধ বিতরণ রেজিস্ট্রার বিগত দুই মাস ধরে হালনাগাদ হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জব্বার নিয়মিত অফিসে আসেন না এবং সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন। তার গাফিলতির সুযোগে নার্সদের খামখেয়ালীপনা চরমে পৌঁছেছে। নার্স ইনচার্জের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০টি সরকারি এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন (সেপট্রিয়াক্সোন ১ গ্রাম) উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ওসি প্রদীপ ও তার বোন রত্মা বালার ভূমি দূস্যুতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
বর্তমানে ৩২ জন ডাক্তারের স্থলে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, হাসপাতালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে, যার ফলে রোগীদের বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বেশি খরচে পরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হচ্ছে।
দুদক কর্মকর্তা আরও জানান, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট দফতরে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
উল্লেখ্য, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার ওই সময় ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন অফিসে মিটিংয়ে থাকায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এই অভিযানে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রশাসনিক গাফিলতি ও দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এলাকাবাসী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।