
শোয়েব হোসেন, গাজীপুর থেকে: গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চুয়ারিখোলা ও দরিপাড়া এলাকায় ঘরে ঘরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেখা দিয়েছে ভয়ঙ্কর মানবাধিকার সংকট। দিনের আলোতে খোদ এসব এলাকায় সন্ত্রাস, ছিনতাই, মাদক কারবার ও হামলার মতো ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হলেও প্রশাসনের কার্যত নিরবতায় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে এই দুই এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র তেল চুরি, জমি দখল, মাদক পাচার ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ, এমনকি মামলা থাকলেও প্রশাসনের একাংশের নিরব প্রশ্রয় ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এই চক্রের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ জানানো স্থানীয় ব্যবসায়ী মামুন মোল্লা সম্প্রতি নিজ বাড়িতে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, এলেম হোসেন, সৌরভ হোসেন, জামান মিয়া, বাবুলসহ আরও কয়েকজন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে মামুন, তাঁর পিতা ও পরিবারের সদস্যদের মারাত্মকভাবে জখম করে। হামলাকারীরা চাপাতি ও লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করে এবং বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ১০ আনার স্বর্ণের চেইন লুট করে নেয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় মামুনকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবারের দাবি, ইতোমধ্যে তাঁর চিকিৎসা ব্যয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, মামুন মোল্লা হচ্ছেন ব্যতিক্রম, যিনি বহুদিন ধরে সাহসিকতার সঙ্গে এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে আসছেন। তার ওপর হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ এখন আরও বেশি ভীত এবং অসহায় বোধ করছেন। অনেকে বলছেন, “আমরা সত্য বলার সাহস পাই না, বললেই জীবনের ঝুঁকি!”
আরও পড়ুনঃ ছিনতাইকারীর কবলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা সাকিব খান
“হিউম্যান এইড এন্ড ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনাল” এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সন্ত্রাসীদের পেছনে রয়েছে বিদেশি অর্থদাতা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। চুয়ারিখোলার একটি পুরনো টিনের ঘর, যার মালিক সৌদি প্রবাসী সাইফুল, মাসিক ৪০ হাজার টাকায় সন্ত্রাসীদের ভাড়া দিয়ে সহায়তা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয়দের দাবি, এই চক্র দিনের পর দিন চুরি, হামলা, মাদক ব্যবসা ও জমি দখলের মতো অপরাধ করে গেলেও পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মামুন মোল্লার উপর হামলার পরও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার সন্তান স্কুলে যেতে ভয় পায়। এলাকার এই দুঃসহ পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?”
প্রশাসনের নিরবতা ও ব্যর্থতার অভিযোগ করে এলাকাবাসী অনতিবিলম্বে কালীগঞ্জের এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চেয়েছেন। তাদের প্রশ্ন—”আর কত রক্ত ঝরলে, কত ঘর পুড়লে জেগে উঠবে প্রশাসন?”