মোঃ মাসুদ রানা মনি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ চোখের সামনে ডুবে গেল স্বপ্নের পরিবার। লক্ষ্মীপুরের একটি পরিবারের জন্য প্রবাস ফেরত ছেলেকে আনতে যাওয়া শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় মৃত্যুর যাত্রায়। চালকের ঘুমে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের সাতজন সদস্য।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (৬ আগস্ট) ভোররাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের পূর্ব বাজার এলাকায়। ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের একটি খালে পড়ে যায় মাইক্রোবাসটি।
নিহতদের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামের কাশারী বাড়িতে। এর আগে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে পরিবারের সদস্যরা প্রবাসী বাহার উদ্দিনকে আনতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। ফিরতি পথে, রাতভর জার্নির ক্লান্তিতে চালক রাসেল ঘুমিয়ে পড়লে ঘটে যায় এ বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা।
প্রবাসী বাহার উদ্দিন ও তার বাবা আব্দুর রহিম বেঁচে ফিরেছেন। তারা জানান, চালককে একাধিকবার বিশ্রামের অনুরোধ জানানো হলেও সে থামেনি। এমনকি কুমিল্লায় অল্পের জন্য আরেকটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পরও সতর্ক হয়নি। বাড়ি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে চালক গভীর ঘুমে ঢলে পড়লে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। ধীরে ধীরে গাড়িটি ডুবে যেতে থাকলে তারা চালককে লক খুলতে বলেন। কিন্তু সে কোনো সহায়তা না করে নিজে জানালার কাঁচ নামিয়ে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ দেশের মানুষ ধানের শীষের পক্ষের শক্তিঃ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
বাহার উদ্দিন, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মীর্জা, ভাবি সুইটি ও শ্যালক রিয়াজ কোনোভাবে গাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাণ বাঁচালেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরতে পারেননি বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), মা মুরশিদা বেগম (৫০), নানী ফয়জুন নেছা (৭০), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া আক্তার (৮) এবং বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫)।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “গাড়ির চালক ঘুমিয়ে পড়ায় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। কয়েকজন যাত্রী গাড়ি থেকে বের হতে পারলেও সাতজন ভেতরে আটকা পড়ে প্রাণ হারান। মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”