
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার চারকোঠার মোড় রেল ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে জুয়ার বোর্ড। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের মাসোয়ারা দিয়েই এ বোর্ড চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। প্রতি মাসে বা সপ্তাহে টাকা না দিলে অভিযান চালিয়ে সাময়িক বন্ধ করা হলেও মাসোয়ারা পৌঁছালেই নতুন করে চালু হয়—একেবারে প্রিপেইড সিমের মতোই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চারকোঠার মোড়ের রকির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে এ বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, বোর্ডের জায়গাটি সাবেক যুবলীগ নেতা নাহানের। ৫ আগস্টের হত্যা মামলা সহ একাধিক মামলার আসামি নাহান বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। তার বৈধ-অবৈধ সব ব্যবসা এখন রকি ও তার দলবল দেখভাল করছে।
অভিযোগ রয়েছে, আগে আওয়ামী লীগের ছায়ায় রকি জুয়া বোর্ড ও মাদক সিন্ডিকেট চালাতেন। তবে ৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি বড় বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। নাহানের বৈধ-অবৈধ ব্যবসা থেকে আসা অর্থ দিয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচির খরচ বহন করছে রকি।
এলাকাবাসীর দাবি, রাত ১১টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলে রমরমা জুয়া খেলা ও মাদক সেবন। এতে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, সংসার ভাঙছে, অনেকে ঋণের বোঝায় জর্জরিত হচ্ছে, চুরি-ছিনতাই বাড়ছে।
স্থানীয় পাঠার মোড় এলাকার গৃহবধূ নাসিমা জানান, “আমার স্বামী অন্যের ব্যাটারি চালিত অটো চালিয়ে সংসার চালাতো। অভাব থাকলেও আমরা ভালোই ছিলাম। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গ থেকে জুয়ার বোর্ডে জড়িয়ে পড়ার পর অটো বন্ধক রেখে সব টাকা হারিয়েছে। পরে আমার স্বামী নিজের শরীরে আঘাত করে অটোর মালিকের কাছে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছিল। সেই অটো ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশ সব উদঘাটন করে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন সংসার চালানোর জন্য আমাকে মানুষের বাসায় কাজ করতে হচ্ছে।”
আরও পড়ুনঃ নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবে নতুন নেতৃত্বে সাইফুল–মঞ্জুরুল–জাহাঙ্গীর
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রকি সাংবাদিকদের প্রথমে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে যুবলীগ নেতা নাহানের বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, “আমি সব সময় ডিবি অফিস আর বিএনপির বড় নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, কিছু খরচ দিলেই সব ঠিক থাকে। আর ৫ আগস্টের পর পুলিশের দাম নেই, তারা ভয়ে বের হয় না। আর ওই জায়গায় কোনো জুয়া খেলা বা মাদক সেবন হয় না। তাছাড়া এটা বোর্ড না, আমাদের ক্লাব—দলের কর্মীরা আড্ডা দেয়, সময় কাটায়। সময় পার করতে কখনও হাজারি খেলার জন্য তাশ নিয়ে বসে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “আমাদের জানা মতে ওই এলাকায় কোনো জুয়া বোর্ড নেই। যদি কোথাও এমন কার্যকলাপ চলে থাকে, সেটি অবৈধ। আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”