
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রতারককে দিয়ে শাহমখদুম থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকসহ সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ।
এ ঘটনায় ওসির প্রত্যক্ষ মদদে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও তাকে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের ব্যানারে স্থানীয় সাংবাদিকরা।
মানববন্ধনে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব ছাড়াও রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী প্রেসক্লাব, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। বক্তারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন— আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারীকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু রাজশাহী নয়, গোটা বিভাগজুড়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে আরএমপি সদর দপ্তরের সামনেই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট নগরীর অগ্রণী ব্যাংক আরডিএ শাখায় জমি নিলাম সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয়দানকারী প্রতারক আক্তারুল ইসলামের সঙ্গে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় তিনি এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ভেঙে দেন এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঘটনাটি ভিডিওচিত্রে ধারণ হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পর সাংবাদিকরা প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে ওসি মামলা নেননি, কেবল লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। পরে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে ক্ষিপ্ত হয়ে ছয় দিন পর ওই প্রতারককে থানায় ডেকে এনে ওসি নিজেই এজাহার লিখিয়ে স্বাক্ষর করান। এরপর সেটি চাঁদাবাজির মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয় (মামলা নং-২/২০২৫)। অথচ প্রতারক আক্তার মুঠোফোনে স্বীকার করেছেন, তিনি মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং প্রশাসনের চাপে স্বাক্ষর করেছেন। তার অডিও সংরক্ষিত রয়েছে বলেও সাংবাদিকরা জানান।
প্রতারক আক্তারের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সাংবাদিকরা তার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু ঘটনার ভিডিওচিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করছে। এমনকি আক্তার নিজেই স্বীকার করেন, তিনি চাপে পড়ে অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন। সাংবাদিকদের দাবি, এটি পুরোপুরি ওসির প্রতিশোধমূলক মামলা, যা পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকারই প্রমাণ।
স্থানীয়ভাবে আক্তারের পরিচয় নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। এক সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এলজিইডি, বিএমডিএ ও গণপূর্ত ভবনে কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেন। এমপি মির্জা আজম ও নুরু ইসলাম ঠান্ডুর আত্মীয় পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে কমিশন আদায় করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এখন আবার তিনি জামায়াত-বিএনপি পরিচয়ে প্রতারণা চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ নালিতাবাড়ীতে সমাজসেবার সহায়তায় ভিক্ষুক সাজেদার ঘরে নতুন স্বপ্ন: পেলেন ৪টি ছাগল
অন্যদিকে, ওসি মাছুমা মুস্তারীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন— টাকার বিনিময়ে মামলা বাণিজ্য, প্রভাবশালী মহল থেকে নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণ, প্রতারণা চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক মামলা দায়েরসহ নানা কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিএনপি-জামায়াত আমলে মিথ্যা মামলা দেওয়া এবং আওয়ামী আমলে উল্টো আওয়ামী নেতাদের কাছ থেকেও টাকা আদায়ের। বর্তমানে তিনি নগরীর কাজলা মৌজায় সাততলা ভবন নির্মাণ করছেন, যার অর্থের উৎস নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। অথচ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে পুলিশ প্রতারকের দালালি করছে।” তারা আরও বলেন, “এ মামলা সাংবাদিকদের কলম ভাঙার হীন ষড়যন্ত্র। কিন্তু কলমকে ভয় দেখানো যায় না।”
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, “ওসি মাছুমা মুস্তারীকে অবিলম্বে অপসারণ করে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে শুধু রাজশাহী নয়, পুরো বিভাগে সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নামবে এবং প্রয়োজনে আরএমপি সদর দপ্তরের সামনেই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।”