মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে পাহাড়খেকো ইয়াছিন বাহিনীর দৌরাত্ম্যে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রাজু কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বাস্তহারা দলের সাধারণ সম্পাদক রাজু এ অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ইয়াছিন ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
রাজু বলেন, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় ইয়াছিনের নেতৃত্বে তার ছিন্নমূল গোলাপের দোকানে হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং দোকানের সামনে রাখা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন (৩১ আগস্ট) দুপুরে তার বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে তিন ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করা হয়। একই রাত ১টা ৪০ মিনিটে দ্বিতীয় দোকানেও হামলা চালিয়ে মালামাল নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে তার প্রায় ৯৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তার স্ত্রী রুনা আক্তার বাদী হয়ে ইয়াছিনসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করে সীতাকুন্ড মডেল থানায় মামলা করেছেন। তবে মামলা হলেও এখনো ইয়াছিন গ্রেপ্তার হয়নি, বরং আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ ফুলবাড়ীতে বেড়েছে পুরোনো কায়দায় সিঁদ কেটে চুরি, উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে দুই দশক আগে ইয়াছিন ও সহযোগী ফারুক চট্টগ্রামে এসে জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় বসতি গড়ে। প্রথমে অটোরিকশা চালালেও পরে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি, অবৈধ প্লট বানানো ও বিদ্যুৎ সংযোগে চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদ অর্জন করে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। প্রবেশের সময় বাইরের লোকদের ভোটার আইডি ও মোবাইল জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। স্থানীয়দের জন্য বিশেষ পাসকার্ড চালু করা হয়, যা ইয়াছিনের অনুমোদন ছাড়া অকার্যকর ছিল। থানায় মামলা করা ছিল নিষিদ্ধ, সব বিচার চলত ইয়াছিন-ফারুকের নিজস্ব আদালতে।
ইয়াছিনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ৭-৮টি মামলা, সীতাকুণ্ড, বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া ৮টি মামলা, ২০২২ সালে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পাহাড় উচ্ছেদ অভিযানে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া ৭টি মামলা, র্যাবের ওপর হামলার মামলা এবং একাধিক হত্যা মামলা অন্তর্ভুক্ত।
নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ী রাজু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ইয়াছিনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।