
জায়েদ মাহমুদ রিজন নালিতাবাড়ি প্রতিনিধিঃ শেরপুর শহরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক প্রসূতির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ঘেরাও ও ভাঙচুর করেছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিক থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হাসপাতাল প্রাঙ্গণে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে।
নিহত প্রসূতির নাম আশামনি (২৫)। তিনি সদর উপজেলার কুসুমহাটি গ্রামের জাহিদ মিয়ার স্ত্রী। শুক্রবার বিকেলে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় সন্তান প্রসবের জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, আশামনি নিজে হেঁটে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করলেও কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা জানান, তিনি মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি—সিজারের সময় চিকিৎসক ও এনেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞের অবহেলায়ই এই মৃত্যু ঘটেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও প্রথমে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।
নিহতের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “ডা. লুৎফর রহমানের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণেই আমার ভাইয়ের বউ মারা গেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
প্রসূতির শ্বশুর মোহাম্মদ উজ্জ্বল মিয়া বলেন, “আমার পুত্রবধূ জীবিত অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারে গেলেও লাশ হয়ে ফিরেছে। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা হাসপাতাল ছাড়ব না।”
আরও পড়ুনঃ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশঃ নিরাপত্তা শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ হাসপাতালে জড়ো হয়। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ঘেরাও করে রাখে এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের গ্রেফতারের দাবি জানায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
শেরপুরের পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রমাণ মিললে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সদর থানার ওসি জোবায়দুল আলম জানান, “পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিহত প্রসূতির নবজাতক কন্যা বর্তমানে হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. লুৎফর রহমান ও এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. জসীম উদ্দীন এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় শেরপুরজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবা ও প্রশাসনিক তদারকি আরও কঠোর করার দাবি জানিয়েছেন।