

মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী: দীর্ঘ প্রায় চার বছরের রাজনৈতিক স্থবিরতা ও বিভাজনের পর রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে অবশেষে ঘোষণা করা হয়েছে নতুন আংশিক কমিটি। ২০২১ সালে গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈসা ও সদস্য সচিব ছিলেন মামুনুর রশিদ মামুন। এবার সেই নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নতুন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজশাহীর বিএনপি রাজনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে।
বিগত কয়েক বছরে রাজশাহী মহানগর বিএনপি নানা অন্তর্দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব সংকটে ভুগছিল। তবে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের ‘নৌকা ডুবির’ পর রাজশাহীর বিএনপিতে হঠাৎ করেই ভিড় জমে বিপুল সংখ্যক নতুন মুখের। তাদের অনেকেই নিজেদের ‘ত্যাগী নেতা’ পরিচয়ে হাজির হলেও, আন্দোলনের কঠিন দিনগুলোতে এদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ পুরোনো নেতাকর্মীদের। ফলে এই নবাগতদের মধ্যে অনেকে ‘হাইব্রিড নেতা’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, নতুন কিছু নেতা দখলবাজি, চাঁদাবাজি, পদবাণিজ্য এমনকি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের দোসরদের আশ্রয় দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত। এর ফলে রাজশাহী মহানগর বিএনপি তিন থেকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একে অপরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযোগ পাঠানো—এসব কারণে দলের ভেতর বিভাজন আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় বিএনপি রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেয়। তারা মনে করে, একসময় যেভাবে মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে রাজশাহীর বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ছিল, সেই ঐক্য ফিরিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “রাজশাহী একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এখানকার নেতাকর্মীদের ঐক্য ফিরিয়ে আনতে আমরা নতুন কমিটি দিয়েছি। আশা করি এই কমিটি রাজশাহীতে বিএনপির শক্ত অবস্থান ফিরিয়ে আনবে।”
বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “দীর্ঘদিন পর ত্যাগী নেতাদের নিয়ে সুন্দর একটি কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এখন এই কমিটির দায়িত্ব হবে নিঃস্বার্থভাবে দলের জন্য কাজ করা এবং আংশিক কমিটিকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া।”
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, “কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে আমরা আনন্দিত। মহানগর বিএনপির নতুন নেতৃত্বের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তারা বিভাজন দূর করে রাজশাহীতে বিএনপিকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করবে।”
আরও পড়ুনঃ ইবির দুই শিক্ষকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা
মহানগর বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, “আমাদের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ—দলীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনা, সাংগঠনিক পুনর্গঠন সম্পন্ন করা এবং রাজশাহীর আন্দোলনমুখী রাজনীতি আবার সক্রিয় করা। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নামব।”
সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, “দীর্ঘদিনের স্থবিরতা আমাদের রাজনীতিকে পিছিয়ে দিয়েছে। আমরা চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে। এখন আর কাউকে বাদ নয়, সবাই রাজশাহীর বিএনপির ঘরে ফিরবে। তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। জনগণের ভোটাধিকার ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে বিএনপি-ই পারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।”
রাজশাহীর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এই আংশিক কমিটি যদি দলীয় বিভাজন পেরিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একত্র করতে পারে, তবে রাজশাহী আবারও বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।